কিডনিতে পাথর—এই নামটি শুনলেই যন্ত্রণা আর অস্বস্তির ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একবার যদি কিডনিতে পাথর জমে যায়, তাহলে তার ব্যথা যেন শরীরের নিজেরই এক নিষ্ঠুর আক্রমণ! তবে আশার কথা হল, বহু প্রাচীনকাল থেকেই এমন কিছু খাবার প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিডনির পাথর গলিয়ে দেওয়ার গুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে—প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, লবণ কম খাওয়া, প্রাণিজ প্রোটিন সীমিত রাখা এবং উচ্চ অক্সালেটযুক্ত খাবার (যেমন পালং শাক, চিনাবাদাম) এড়িয়ে চলাই কিডনির পাথর প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। তবে পাশাপাশি কিছু খাবার রয়েছে যেগুলি বহু যুগ ধরে প্রচলিত ‘প্রাকৃতিক প্রতিষেধক’ হিসেবে বিবেচিত।
চলুন জেনে নিই সেই খাবারগুলো সম্পর্কে—
১. বার্লি পানি (যব পানি)
প্রাচীনকাল থেকেই কিডনিকে পরিষ্কার রাখার জন্য বার্লি পানি বা যব পানি ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে পাথরের কণাগুলো বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। ঠান্ডা করে পান করলে এটি অত্যন্ত সতেজ ও উপকারী।
২. লেবুর রস
লেবুতে রয়েছে প্রাকৃতিক সাইট্রেট, যা পাথর গঠনে বাধা দেয় এবং বিদ্যমান পাথর গলাতেও সহায়তা করে। প্রতিদিন গরম পানিতে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া অত্যন্ত কার্যকর।
৩. ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার
প্রচলিত ধারণার বিপরীতে, গবেষণায় দেখা গেছে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার পাথরের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এটি অন্ত্রে অক্সালেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীরে তার শোষণ রোধ করে। তিলবীজ, বাদাম, টোফু ও নির্দিষ্ট সবুজ শাক-সবজি এর উৎস হতে পারে।
৪. ডাবের পানি
প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ ডাবের পানি কিডনির জন্য একপ্রকার ওষুধই বলা চলে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক পরিষ্কার রাখে এবং খনিজ জমে পাথর গঠনের সম্ভাবনা কমায়।
৫. ডালিম
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ডালিম কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরে জমে থাকা খনিজের গঠনে বাধা দেয়। এর প্রাকৃতিক অ্যাসিড ইউরিন ফ্লো বাড়িয়ে পাথরের উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।
আরো যা খেয়াল রাখবেন
– প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
– অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
– খাবারে সুষমতা বজায় রাখুন—ফল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য ও হালকা প্রোটিন খাবার খান।
এই ঘরোয়া উপায়গুলো কিডনি পাথরের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাথমিক স্তরে সহায়ক হতে পারে। তবে যেকোনো অসুস্থতায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Leave a Reply