তেহরান থেকে আসা সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় যেন বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর মেরুদণ্ডে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—ইরান এখন পারমাণবিক জ্বালানি চক্রের সমস্ত ধাপেই সফল।
এটাই সেই নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাইকেল, যার উপর দাঁড়িয়ে থাকে একটি দেশের পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক সক্ষমতা। এটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে গবেষণা, চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা—এমনকি সম্ভাব্য অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনাও।
মোহাম্মদ ইসলামী বলেন, “পারমাণবিক প্রযুক্তি শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক অর্জন নয়—এটি একটি কৌশলগত, শক্তিশালী ও জাতীয় সক্ষমতার প্রতীক।”
তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানের এই অগ্রগতিকে রুখে দিতে বহু বছর ধরে মরিয়া হয়ে আছে। শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়েই থেমে থাকেনি তারা—ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে নাশকতা, সাইবার হামলা এমনকি সন্ত্রাস পর্যন্ত চালিয়েছে।
তবুও সেই সব বাধা অতিক্রম করে আজ ইরান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা এক কথায় পূর্ণ পরিপক্কতা।
এই ঘোষণা পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে ইসরাইলের জন্য এক ধরনের স্ট্র্যাটেজিক দুঃস্বপ্ন (Strategic Nightmare)। কারণ, ইরান এখন চাইলে নিজেরাই জ্বালানি তৈরি করতে পারবে। বাইরের কোনো দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না। আর এটি সেই “লাল রেখা”, যার ওপারে ইরানকে কখনোই যেতে দিতে চায়নি পশ্চিমারা।
ইসলামী বলেন, “তারা বলে—তোমরা চুল্লি রাখতে পারো, কিন্তু জ্বালানি তৈরি করতে পারবে না। সবসময় আমাদের কাছ থেকেই কিনে নিতে হবে। কিন্তু আমরা এই দ্বিমুখী নীতি কখনোই মানিনি।”
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার—ইরান শুধু নিজেদের আত্মনির্ভরশীলতা তৈরি করেনি, বরং এক প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি সেই বার্তা—পশ্চিমা দমননীতি, নিষেধাজ্ঞা বা চাপে এক জাতির বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সম্মানকে চিরকাল দমন করে রাখা যায় না।
তবে প্রশ্ন উঠছে—এই পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক জ্বালানি চক্র কি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে? নাকি এর ভেতরে লুকিয়ে আছে এমন এক সম্ভাবনা, যা ভবিষ্যতে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারে?
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA), যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইসরাইল সবাই গভীর দুশ্চিন্তায়। তাদের দৃষ্টিতে, ইরানের এই অর্জন একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
তবে ইরান তাদের অবস্থানে অটল। বলছে, “আমরা কোনো অস্ত্র তৈরি করছি না। বরং এটি বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জরুরি।”
তবুও বাস্তবতা হলো, এই প্রযুক্তি যখন পূর্ণাঙ্গ হয়, তখন সেটিকে শান্তি ও যুদ্ধ—দুই উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা সম্ভব।
এক কূটনৈতিক বারুদে ভরা ঘোষণা
এই ঘোষণাকে তাই কেবল প্রযুক্তিগত সাফল্য বললে ভুল হবে। এটি এক কূটনৈতিক বারুদে ভরা ঘোষণা, যা মধ্যপ্রাচ্যের পরবর্তী উত্তেজনা, আলোচনার টেবিল, এমনকি সামরিক কৌশলকেও নতুনভাবে গড়ে দিতে পারে।
Leave a Reply