অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
চিঠিতে টিউলিপ বলেছেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়েছে, তা মীমাংসার উদ্দেশ্যে তিনি ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে লেখা চিঠিতে চলমান বিতর্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ চেয়েছেন টিউলিপ। তাই আসছে সপ্তাহে অধ্যাপক ইউনূসের লন্ডন সফরের সময় তাঁর সাক্ষাৎ চেয়েছেন টিউলিপ। লন্ডন সফরে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
চিঠিতে টিউলিপ আশা প্রকাশ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ‘দুদকের দ্বারা সৃষ্ট ভুল–বোঝাবুঝি দূর করতে’ সহায়তা করবে।
টিউলিপ লিখেছেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। লন্ডনে জন্মেছি। এক দশক ধরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পদ বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। বাংলাদেশের প্রতি আমার হৃদয়ের টান রয়েছে। তবে এটা সেই দেশ নয়, যেখানে আমি জন্মেছি, বসবাস করেছি বা নিজের পেশাজীবন গড়ে তুলেছি।’
‘এ বিষয়টি আমি দুদকের কাছে পরিষ্কার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা লন্ডনে আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগে আগ্রহ দেখায়নি। তারা বারবার ঢাকার একটি ঠিকানায় এলোমেলোভাবে চিঠি পাঠাচ্ছে,’ লিখেছেন টিউলিপ।
চিঠিতে টিউলিপ যোগ করেন, ‘এই কাল্পনিক তদন্তের প্রতিটি ধাপ গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমার আইনি দলের সঙ্গে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি।’
অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি লেখা চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক আরও বলেন, ‘আমি জানি আপনি নিশ্চয়ই বোঝেন, এমন প্রতিবেদন যেন আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও আমার দেশের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটায়, সেটি নিশ্চিত করা কতটা জরুরি।’
টিউলিপের দাবি, তিনি তাঁর খালার (শেখ হাসিনা) বিরোধীদের পরিচালিত একটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুৎসা অভিযানের’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। গত মাসে বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে এমন কোনো পরোয়ানা বা আদালতের শুনানির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন টিউলিপ। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ ‘২ বি’ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতাভুক্ত দেশ হওয়ায়, যুক্তরাজ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে বাংলাদেশ থেকে স্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখাতে হয়, যা মন্ত্রী বা বিচারক পর্যায়ে যাচাই করে অনুমোদন দিতে হয়।
গত বছর যুক্তরাজ্যে সম্পদ অর্জন–সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ নিজেই ব্রিটিশ মন্ত্রীদের আচরণবিধি তদারক কর্মকর্তা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের উপদেষ্টা ম্যাগনাসের কাছে হাজির হন। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় গত জানুয়ারিতে তাকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। তিনি ২০২৪ সালের যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে জয়ী হয়ে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন সরকারে মন্ত্রী হন। তবে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও একাধিক অভিযোগের জেরে পরে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।
Leave a Reply