free tracking

নামজারি আর লাগবেনা এই ৭ শ্রেণির দলিলে!

ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এখন থেকে ৭ শ্রেণির দলিলের ক্ষেত্রে আর আলাদা করে নামজারি করতে হবে না। সরাসরি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রির পর সেই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে এসিল্যান্ড অফিসে, এবং নামজারির প্রক্রিয়াটিও সম্পন্ন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। ফলে ভূমি মালিকদের সময়, অর্থ ও হয়রানি থেকে মুক্তি মিলবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং উপজেলা ভূমি অফিসের মধ্যে একটি প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমি অফিসে চলে যাবে। এর ফলে ভূমির মালিকানা স্থানান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামজারিও সম্পন্ন হবে, আলাদা করে কোনো আবেদন বা অফিসে যাওয়া লাগবে না।

কোন কোন দলিলে নামজারি লাগবে না

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিচের সাতটি শ্রেণির দলিল এখন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হবে:

১. সাধারণ বিক্রয় দলিল (সাপ কোওলা দলিল):
জমি বিক্রির পর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার নামে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হয়ে যাবে। এসিল্যান্ড অফিসে আলাদাভাবে গিয়ে কোনো আবেদন করতে হবে না।

২. হেবা দলিল:
যখন কোনো ব্যক্তি শর্তহীনভাবে তার ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করে হেবা দলিল সম্পাদন করেন, তখন সেটি সরকারি সার্ভিস চার্জ দিয়ে সম্পন্ন হয়। এই দলিলও এখন থেকে এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হবে ডিজিটাল মাধ্যমে, ফলে নামজারির প্রয়োজন পড়বে না।

৩. হেবা বিল আওয়াজ দলিল:
দূরবর্তী আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে হেবা বিল আওয়াজ দলিলের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। মালিকানা হস্তান্তর সাপেক্ষে দলিল সম্পন্ন হলে নামজারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাবে।

৪. এওয়াজ বদল দলিল:
সম্পত্তির বিনিময় বা মালিকানা পরিবর্তনের জন্য যখন দুই বা একাধিক ব্যক্তি পরস্পর সম্মত হয়ে দলিল সম্পাদন করেন, তখন সেটিও এখন থেকে নামজারি ছাড়াই কার্যকর হবে।

৫. ওসিয়তনামা দলিল:
কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় তার সম্পত্তি ভবিষ্যতে কাকে দিতে চান তা নির্ধারণ করে দলিল করে যান। এই ওসিয়তনামা দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি হওয়ার পর আর আলাদা করে নামজারি করতে হবে না।

৬. আপোষ বণ্টননামা দলিল:
মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা পারস্পরিক সম্মতিতে অবিভক্ত সম্পত্তি বণ্টনের জন্য যে দলিল করেন, সেটিও এখন স্বয়ংক্রিয় নামজারির আওতায় পড়বে।

৭. না দাবি দলিল:
যদি কোনো ব্যক্তি ভুলক্রমে তার নামে রেকর্ড হওয়া জমির ওপর মালিকানা দাবি না করেন এবং সেই দাবি প্রত্যাহার করে দলিল করেন, অথবা বন্ধক সম্পত্তি ফেরত দিয়ে না দাবি দলিল সম্পাদন করেন, তাহলে সেটিও নামজারি ছাড়াই কার্যকর হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিমধ্যে দেশের ২১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এই অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই দেশের সব জেলায়, সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে।

সরকারি এই পদক্ষেপ ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। একদিকে যেমন সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নামজারি সংক্রান্ত হয়রানির অবসান ঘটবে।

সাত শ্রেণির দলিলের জন্য নামজারির বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল অটোমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে ভূমি মালিকানা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি যেমন আরও সহজ হবে, তেমনি দুর্নীতিও কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র:https://tinyurl.com/t5sjvkvt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *