একজন মা যখন গর্ভবতী হন, তখন তাঁর প্রতিটি খাবারের প্রভাব পড়ে গর্ভে থাকা শিশুর ওপর। আর সেই কারণেই গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে এক বিশেষ পুষ্টি উপাদানের কথা আজকাল বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন—কোলিন।
কোলিন কেন জরুরি?
কোলিন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক গঠনে সহায়তা করে। এটি লিভারের স্বাস্থ্য, সেল মেমব্রেন তৈরিতে এবং স্মৃতিশক্তি ও স্নায়ু সঙ্কেত পৌঁছানোর প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে।
ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান ডা. বর্ষা গোরে বলেন, “গর্ভাবস্থার শুরুতেই কোলিন খাওয়া শুরু করা উচিত, সম্ভব হলে গর্ভধারণের আগেই। কারণ শিশুর নিউরাল টিউব (যা পরে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতে রূপান্তরিত হয়) প্রথম কয়েক সপ্তাহেই গঠিত হয়, তখনই কোলিন সবচেয়ে দরকারি।”
কখন থেকে শুরু করবেন?
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। অনেক সময় মহিলারা বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা গর্ভবতী—তখনও শিশুর মস্তিষ্কের গঠন শুরু হয়ে যায়। তাই গর্ভধারণের আগে বা অন্তত প্রথম তিন মাসে কোলিন নেওয়া শুরু করাই ভালো।
গর্ভবতী নারীদের প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ মিলিগ্রাম কোলিন গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে বেশিরভাগ নারীই এই পরিমাণ পূরণ করতে পারেন না, বিশেষ করে যারা নিরামিষাশী।
কোন খাবারে মিলবে কোলিন?
বিশেষজ্ঞরা খাবার থেকেই কোলিন নেওয়ার পরামর্শ দেন। নিচে কয়েকটি সহজলভ্য ও কার্যকর উৎস তুলে ধরা হলো:
ডিমের কুসুম: একটি ডিমের কুসুমে প্রায় ১২৫ মিগ্রা কোলিন থাকে। দিনে ১-২টি ডিম খাওয়া যথেষ্ট উপকারী।
মাছ: সালমন, কড ইত্যাদি মাছ কোলিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ—যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
অর্গান মিট (যেমন লিভার): প্রচুর কোলিন থাকলেও সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, কারণ এতে ভিটামিন A-এর মাত্রাও অনেক বেশি।
নিরামিষ বিকল্প: সয়াবিন, রাজমা, কোয়িনোয়া, ব্রকোলি, ফুলকপি, ও গোটা শস্য। যদিও এগুলিতে কোলিন কম, নিয়মিত খেলে কিছুটা ঘাটতি পূরণ করা যায়।
যদি ডিম বা মাছ খেতে না পারেন?
অনেকেই নিরামিষাশী বা কিছু খাবারে অ্যালার্জি থাকায় কোলিনের উৎস থেকে বঞ্চিত হন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে কোলিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। তবে সব প্রেগনেন্সি সাপ্লিমেন্টে কোলিন থাকে না, তাই লেবেল দেখে ও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
কোলিন কীভাবে আপনার শিশুকে উপকার করে?
- শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ঠিকমতো গঠন হয়
- নিউরাল টিউব ডিফেক্টসের ঝুঁকি কমে
- পরবর্তী জীবনে শিশুর স্ট্রেস মোকাবিলা, শেখার ক্ষমতা এবং স্মৃতি আরও উন্নত হতে পারে
শেষ কথায়
কোলিন ছোট একটি পুষ্টি উপাদান হলেও তার প্রভাব অনেক বড়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এই উপাদান শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি গঠনে সাহায্য করে।
Leave a Reply