কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ—যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিক অ্যাসিড—বের করে দিয়ে শরীরকে ‘ডিটক্সিফাই’ করে। এছাড়া এটি সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইডের মতো ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা সরাসরি মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
কিন্তু কিডনি আক্রান্ত হলে শরীরে নানা সংকেত দেখা দেয়, যার মধ্যে সবচেয়ে আগে লক্ষণ দেখা দিতে পারে আমাদের পায়ের মধ্যে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই গুরুত্বপূর্ণ চারটি লক্ষণ—
১. গোড়ালিতে ব্যথা বা হিল পেইন
কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমে যেতে শুরু করে। এই অতিরিক্ত অ্যাসিড পায়ের জয়েন্টে জমে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। দীর্ঘমেয়াদী হিল পেইন দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. পা ফুলে যাওয়া বা লেগ সোয়েলিং
কিডনি যদি ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তবে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে পানি জমে যেতে পারে। এই জমে থাকা পানি সাধারণত গ্রাভিটির কারণে পায়ে বেশি জমে দেখা দেয়। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার পূর্বাভাস হতে পারে।
৩. পায়ের মাংসপেশিতে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা
কিডনি দুর্বল হয়ে গেলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায় এবং ফসফরাস বেড়ে যায়, যার ফলে মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। রাতে ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া বা দিনের বেলায় পেশিতে ক্রমাগত ব্যথা অনুভূত হলে তা কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
৪. শুষ্ক ত্বক ও চর্মরোগ
কিডনি একটি হরমোন (এরিথ্রোপয়েটিন) তৈরি করে যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে এই হরমোন কমে যায় এবং রক্তে অক্সিজেন পরিবহন ব্যাহত হয়। এর ফলে ত্বক শুকিয়ে যায়, র্যাশ বা চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত কিছু লক্ষণ:
- প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ কমে যাওয়া
- শরীর ফুলে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট
- ক্ষুধামান্দ্য
- বমি ও খিচুনি
- উচ্চ রক্তচাপ
বিশেষ দ্রষ্টব্য
উল্লেখিত উপসর্গগুলো কেবল কিডনির সমস্যার কারণেই হয় এমন নয়, অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে। তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে অবশ্যই একজন নেফ্রোলজিস্ট বা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসায় কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব।
Leave a Reply