free tracking

নতুন ভূমি আইনে যেসব কাগজপত্র না থাকলে জমি হারাতে হবে!

ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, মামলা এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা পারিবারিক বিরোধ অনেক সময়ই দেখা যায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণে। নতুন ভূমি আইনে যে কাগজপত্র না থাকলে জমি হারাতে হবে- এই বাস্তবতা থেকে রক্ষা পেতে হলে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি। জমির মালিকানা, ভোগদখল ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব দলিল অপরিহার্য, সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যতে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

জমির দখল ও মালিকানা নির্ধারণে প্রমাণপত্রের গুরুত্ব

জমি ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে রেজিস্ট্রার অফিসে সম্পাদিত স্ট্যাম্পে সইকৃত চুক্তিপত্রই জমির দলিল। এতে সাক্ষীর স্বাক্ষর ও রেজিস্ট্রারের সিল থাকে। এই দলিলের পূর্ববর্তী দলিলগুলোকেই বলা হয় বায়া দলিল।জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিলের কপি সংগ্রহ করা যায়। জমির মালিক হিসেবে দলিল সংরক্ষণের দায়িত্ব মূলত আপনার।

পর্চা ও খতিয়ানের ভূমিকা

জমির খতিয়ান বা পর্চা হলো জরিপে প্রাপ্ত ভূমি সংক্রান্ত সরকারি নথির অনুলিপি। জমির মালিক পর্চা সংগ্রহের পর সেই নথিকে বলা হয় পর্চা। পর্চার মূল দলিল ভূমি অফিসে সংরক্ষিত থাকে, যাকে খতিয়ান বলা হয়।

দাখিলা হলো খাজনা পরিশোধের সরকারি প্রমাণ

ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা প্রদানের পর তহসিল অফিস থেকে যে রশিদ প্রদান করা হয়, সেটিই হলো দাখিলা। জমি বিক্রয়ের সময় দাখিলা দাখিল করা বাধ্যতামূলক। এটি জমি বর্তমানে কার দখলে আছে, তার বৈধতা প্রমাণ করে। এমনকি খাজনা মওকুফ থাকলেও দুই টাকা প্রদান করে দাখিলা সংগ্রহ করা সম্ভব।

ওয়ারিশ সনদ ও সাকসেসন সার্টিফিকেট

উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পেতে হলে ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার সনদ অত্যন্ত জরুরি। এটি ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। আদালতের মাধ্যমে যে উত্তরাধিকার সনদ ইস্যু হয়, সেটি সাকসেসন সার্টিফিকেট নামে পরিচিত।

মিউটেশন (নামজারি) কপি

জমির মালিকানার পরিবর্তনের রেকর্ড হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন করতে হয়। দুই জরিপের মাঝামাঝি সময়ে জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে তার দলিল হচ্ছে নামজারি বা মিউটেশন। এটি জমির মালিকানা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

আদালতের রায় ও ডিক্রি

ভূমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে সেই রায় বা ডিক্রি হচ্ছে চূড়ান্ত দলিল। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভূমি মালিকানা নির্ধারণে অন্যতম প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হয়।

মৌজা ম্যাপ ও বাস্তব খণ্ডচিত্র

মৌজা ম্যাপ হলো ভূমির একাধিক খণ্ডচিত্রের ভিজ্যুয়াল প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি জেলা প্রশাসকের অফিসে মৌজা ম্যাপ সংরক্ষিত থাকে এবং নির্ধারিত ফি দিয়ে তা সংগ্রহ করা যায়। এটি ভূমির সীমানা ও অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।

জমির দখল ও ব্যবহার

জমির দখল প্রমাণের জন্য আলাদা সরকারি কাগজপত্র না থাকলেও দাখিলা বা রশিদই দখলের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। তবে জোরপূর্বক দখল নয়, বরং বৈধ মালিকানার ভিত্তিতে জমি ব্যবহার করাকেই আইন স্বীকৃতি দেয়।

ভূমি আইনের বর্তমান বাস্তবতায় নিজের জমির দখল, মালিকানা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে উপরোক্ত নয়টি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ আবশ্যক। সচেতন না থাকলে শুধু জমি নয়, হারিয়ে যেতে পারে প্রজন্মের অর্জনও। এখনই সময় প্রয়োজনীয় দলিলগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করার, যাতে ভবিষ্যতে জমি সংক্রান্ত বিরোধ বা মামলার ঝুঁকি কমানো যায়।

এ বিষয়ে আরও তথ্য জানার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস, আইনজীবী বা রেজিস্ট্রার দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *