free tracking

রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে সহায়ক ‘তেজপাতা’

সপ্তম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে তোমরা তেজপাতা সম্পর্কে জেনেছ। রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে সহায়ক এই পাতা বিষয়ে আরো যা জানতে পারো—

রান্নায় মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেজপাতা (Bay leaf)। এটি Lauraceae পরিবারের সুগন্ধিযুক্ত পাতাবিশেষ। তেজপাতাগাছ সাধারণত দুই ধরনের হয়—ভারতীয় উপমহাদেশীয় তেজপাতা ও ইউরোপীয় ইধু ষবধভ। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মায় ভারতীয় উপমহাদেশীয় তেজপাতা।

এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ভালো জন্মে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum tamala| ইউরোপীয় ইধু ষবধভ-এর উৎপত্তিস্থল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ ইউরোপ, তুরস্ক, গ্রিস ও ইতালি। এই গাছ ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Laurus nobilis।

ভারতীয় উপমহাদেশীয় তেজপাতা মাঝারি আকারের চিরহরিৎ গাছ। ঘন ডালপালা সমৃদ্ধ এই গাছ সাধারণত ৮-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা লম্বাটে, শক্ত ও মসৃণ। রং গাঢ় সবুজ।

শুকালে হালকা বাদামি-সবুজ। ঘষলে বা ভাঙলে সুগন্ধ বের হয়। শুকনা পাতাই মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বসন্তকালে এই গাছে ছোট ছোট হলুদাভ সাদা ফুল ফোটে। ফুল গুচ্ছাকারে দেখা যায়।
এদের ছোট কালচে বা বেগুনি রঙের ফল ধরে। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয় এই গাছের। বাংলাদেশে তেজপাতা একটি জনপ্রিয় মসলা। গরু, খাসি বা মুরগির মাংসের বিরিয়ানিতে তেজপাতা অন্যতম উপকরণ। যে কোনো প্রাণীর মাংস রান্নাও তেজপাতা ব্যবহার করা হয়। এতে সুগন্ধ বাড়ে।

কিছু রান্নার শুরুতেই (যেমন—মসুর, মুগ বা ছোলার ডাল ভাজিতে) তেল গরম করে তেজপাতা দিয়ে ফোড়ন দেওয়া হয়। সবজি, বিশেষ করে মিক্সড সবজি, আলু-মাংস বা কফি পাতা ও কচু পাতার তরকারিতেও তেজপাতার ব্যবহার দেখা যায়। রং চায়ে তেজপাতা বিশেষ সুগন্ধ যোগ করে। এ ছাড়া শুঁটকি ভুনা বা মাছ ভুনা জাতীয় রান্নায়ও অনেকে তেজপাতা ব্যবহার করে। এতে মাছের গন্ধ দূর হয় এবং স্বাদ বাড়ে।

তেজপাতার রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতাও। পেটে গ্যাস, অম্বল ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে এই পাতা। হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। গরম পানিতে তেজপাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে গলা ব্যথা ও কাশি কমে। শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা উপশমে সহায়ক তেজপাতা।

এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তনালির কার্যকারিতা বাড়ায়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তেজপাতা থেকে তৈরি তেল ব্রণ, চুলকানি ও খুশকির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে অতিরিক্ত তেজপাতা খেলে বমি, অ্যালার্জি বা গ্যাস হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *