free tracking

জমি নিয়ে প্রতারণা করলেই যত বছরের জেল!

জমি নিয়ে প্রতারণা, জালিয়াতি, জোরজবরদস্তি বা অবৈধ দখলের মতো অপরাধ করলে এখন থেকে হতে পারে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড। দীর্ঘদিন দেওয়ানী আদালতে মামলা ঝুলে থাকার দিন শেষ। নতুন করে প্রণীত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী এসব অপরাধ এখন ফৌজদারী আদালতে দ্রুত বিচারযোগ্য।

নতুন এই আইনে বলা হয়েছে, অন্যের জমি নিজের বলে দাবি করা, জাল দলিল তৈরি, ভুল তথ্য দিয়ে জমি বিক্রি, ভুয়া পরিচয়ে জমি হস্তান্তর, জোর করে জমি দখল বা হুমকি— সবকিছুই এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই আইনে মামলার বিচার শেষ করার সময়সীমা ৬ মাস বা ১৮০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর এই নতুন আইনে প্রথম মামলা হয়। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সালমা বেগম নামের এক নারী বাদী হয়ে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বশির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তার ও তার মেয়ের জমির জাল দলিল তৈরি করে নিজ নামে নামজারি করেন এবং দখলের চেষ্টা চালান। প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। আদালত মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআই-কে দেন।

আইনের ৪(১) ধারা অনুযায়ী, জমি নিয়ে প্রতারণা, মিথ্যা তথ্য প্রদান, জাল দলিল তৈরি, ভুল পরিচয়ে দলিল সম্পাদনসহ মোট ১২টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার ৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতারণার উদ্দেশ্যে মিথ্যা দলিল তৈরি বা পরিবর্তন করা, অথবা কাউকে মিথ্যা দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করাও একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

মামলার কার্যক্রম চলে ধাপে ধাপে। প্রথমে আদালত আসামিকে হাজিরার সমন পাঠান। হাজির না হলে ওয়ারেন্ট, এরপর পলাতক থাকলে হুলিয়া জারি হয়। তারপর দুইটি বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবুও আসামি হাজির না হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হয়, যাকে বলা হয় Trial In Absentia।

আসামি উপস্থিত হলে আদালত অভিযোগ পড়ে শোনান। স্বীকার করলে তাৎক্ষণিক সাজা ঘোষণা করা হয়। অস্বীকার করলে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্কের পর আদালত রায় ঘোষণা করেন। দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তি, না হলে খালাস। যে কোনো পক্ষ আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট হলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন।

নতুন এই আইন কার্যকর হওয়ার ফলে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ দমন সহজ হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ মানুষও এখন ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় এগিয়ে আসছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *