বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ। এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো—এই মাত্রা বেড়ে গেলেও শরীরে শুরুতে তেমন কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে বহু মানুষ অজান্তেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড ধীরে ধীরে আর্টারিতে জমাট বাঁধে, যাকে বলা হয় অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis)। এর ফলে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, বিশেষ করে হাত-পায়ে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ঠিকমতো পৌঁছায় না, তখন তা পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD)-এ পরিণত হয়।
এই রোগের বেশ কিছু লক্ষণ আছে যা আমরা অনেকেই অবহেলা করি। নিচে তুলে ধরা হলো এমন কিছু সাধারণ ও গুরত্বপূর্ণ লক্ষণ, যেগুলো দেখা দিলে সতর্ক হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:
কী লক্ষণে বুঝবেন রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেছে?
১. হাত-পায়ে ব্যথা ও টান ধরা
- হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা বা দীর্ঘক্ষণ টাইপ করার সময় হঠাৎ মাসেলে তীব্র ব্যথা।
- রেস্ট নিলে সেই ব্যথা কমে আসে।
- কখনও রাত্রিবেলা শোয়ার সময় হঠাৎ পায়ের পেশিতে টান ধরা বা খিচুনি।
২. ঝিনঝিনে অনুভূতি বা হুল ফোটানোর মতো ব্যথা
- হাত-পায়ের পাতায় অসারতা, চিমটি কাটার মতো অনুভব।
- নার্ভ সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
৩. এক হাত বা পা বেশি ঠান্ডা লাগা
- ডান বা বা হাত/পা তুলনামূলকভাবে বেশি ঠান্ডা লাগলে সেটিও হতে পারে ব্লাড ফ্লো বাধাগ্রস্ত হওয়ার ইঙ্গিত।
৪. ত্বকের রঙ পরিবর্তন
- হাত বা পায়ের বিশেষ অংশে নীল, বেগুনি বা বাদামি বর্ণ দেখা দিতে পারে।
- অনেক ক্ষেত্রে ব্লাড ভেসেল গুলো ত্বকের ওপরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৫. আঘাত বা ক্ষত সহজে না শুকানো
- হাত বা পায়ের ক্ষত দীর্ঘদিন শুকাতে না চাওয়া।
- ক্ষতস্থানে রক্ত চলাচল ঠিকভাবে না হওয়ায় হিলিং প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৬. লোম ঝরে যাওয়া ও চকচকে ত্বক
- কোনো নির্দিষ্ট স্থানে লোম পড়ে গিয়ে সেই জায়গা চকচকে হয়ে উঠলে, সেটিও হতে পারে PAD-এর লক্ষণ।
৭. হাতে বা পায়ে পালস অনুভব না হওয়া
- চিকিৎসকেরা মাঝে মাঝে রেডিয়াল বা পায়ের পালস চেক করে থাকেন।
- কোলেস্টেরল জমে গেলে পালস দুর্বল বা অনুপস্থিত হতে পারে।
৮. জ্যানথোমাস (Xanthomas)
- আঙুল বা কব্জির জয়েন্টের কাছে স্কিনের নিচে হলুদ বা কমলা রঙের ফ্যাট জমা।
- এটি সরাসরি হার্ট ডিজিজের লক্ষণ না হলেও উচ্চ কোলেস্টেরলের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
যাদের বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিচের যেকোনো কন্ডিশনে যারা আছেন, তাদের এই লক্ষণগুলোর প্রতি আরও বেশি সতর্ক থাকা জরুরি:
- উচ্চ রক্তচাপ আছে
- পারিবারিকভাবে হার্ট ডিজিজের ইতিহাস
- ডায়াবেটিস আক্রান্ত
- ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস আছে
করণীয় কী?
এসব লক্ষণ দেখা গেলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রক্ত পরীক্ষা করে লিপিড প্রোফাইল (Lipid Profile) করিয়ে জানা দরকার কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কোথায় রয়েছে।
অনেক সময় হার্টের আর্টারিতে ৭০%-৮০% ব্লকেজ হলেও উপসর্গ প্রকাশ পায় না। হঠাৎই ঘটে যেতে পারে ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’-এর মতো হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। তাই সচেতন হোন, নিজের শরীরকে ভালোবাসুন এবং নিয়মিত চেকআপ করান।
আপনার শরীরের ছোট্ট একটি লক্ষণই হতে পারে বড় বিপদের পূর্বাভাস। তাই অবহেলা নয়, এখনই চিকিৎসকের কাছে যান।
Leave a Reply