নীরবে ভয়ংকর এক স্বাস্থ্যঝুঁকির নাম ফ্যাটি লিভার বা চর্বিযুক্ত লিভার। জীবনযাপনে স্থবিরতা, প্রক্রিয়াজাত খাবারের আধিক্য এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এটি এখন অনেক ঘরেই উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে সুসংবাদ হলো, খাবারই হতে পারে এর প্রতিকার। হার্ভার্ড-প্রশিক্ষিত লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. সওরভ শেঠি সম্প্রতি এমন চারটি হালকা খাবারের কথা জানিয়েছেন, যা নিয়মিত খেলে এবং সুস্থ জীবনযাত্রার সঙ্গে মিল রেখে চললে লিভারে জমা চর্বি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
এই খাবারগুলো কেবল পুষ্টিকরই নয়, এগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে লিভারের চর্বি বিপাক, প্রদাহ হ্রাস এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিবেচনা করে।
১. খেজুর ও আখরোট: মিষ্টিতেও আছে লিভারের বন্ধুতা
অনেকেই মনে করেন খেজুর বেশি মিষ্টি, তাই হয়তো স্বাস্থ্যকর নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, খেজুরে থাকা দ্রবণীয় আঁশ হজম ধীর করে এবং রক্তে শর্করার শোষণ কমিয়ে লিভারে চর্বি জমা কমাতে সহায়তা করে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হলে আখরোট, ফলাফল হয় আরও শক্তিশালী।
আখরোট হলো উদ্ভিজ্জ উৎসের অন্যতম সেরা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাণ্ডার। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি লিভারের প্রদাহ কমাতে এবং এনজাইমের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কার্যকর। এমনকি একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা নিয়মিত আখরোট খান, তাদের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
প্রতি সপ্তাহে দুই দিন, মাত্র দুটি খেজুরের সঙ্গে এক মুঠো আখরোট খেলে এটি হতে পারে শরীর ও মনের জন্য এক কোমল আত্ম-পরিচর্যার অভ্যাস।
২. ডার্ক চকলেট ও বাদাম: অনন্য এক সুস্বাদু প্রতিরক্ষা
লিভারের জন্য চকলেট? প্রথমে অবাক লাগলেও, অন্তর্নিহিত শক্তি লুকিয়ে আছে ডার্ক চকলেটের পলিফেনলে। কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কোকোযুক্ত ডার্ক চকলেটে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারে চর্বির কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
এর সঙ্গে বাদাম যেমন কাঠবাদাম বা পেস্তা মিশিয়ে খেলে মেলে অতিরিক্ত ভিটামিন ই ও স্বাস্থ্যকর চর্বি, যা লিভার কোষকে রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগী ভিটামিন ই ও অসম্পৃক্ত চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করেন, তাদের লিভার কার্যকারিতায় উন্নতি দেখা যায়।
এই খাবারটি অতিরিক্ত খাওয়ার ছাড়পত্র নয়, বরং সচেতনভাবে সপ্তাহে এক বা দুই দিন একটি ছোট টুকরো ডার্ক চকলেট ও কয়েকটি বাদাম খাওয়া হতে পারে শরীর ও মনের জন্য সুখকর এক উপায়।
৩. মধু-দারচিনিতে ভেজানো আপেল: অন্ত্র ও লিভারের যুগলবন্ধন
কাঁচা মধু আর দারচিনি ছিটিয়ে দেওয়া আপেল স্লাইস শুধু মুখরোচক নয়, বরং অন্ত্র ও লিভারের জন্য এক অসাধারণ সমন্বয়। আপেলে থাকা পেকটিন নামক দ্রবণীয় আঁশ অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সহায়তা করে এবং চর্বিকে শরীর থেকে বের করে দেয়।
অন্যদিকে কাঁচা মধু নিয়ন্ত্রিতভাবে খেলে উপকারী মাইক্রোবায়োমের বৃদ্ধি হয়, যা লিভারের বিপাকক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। গরম কিংবা ঠান্ডা পরিবেশনে এই স্ন্যাকটি বছরজুড়েই খাওয়া যায়, এবং এটি প্রমাণ করে—সুস্থতার জন্য সবসময় তিক্ত স্বাদ প্রয়োজন হয় না।
৪. গ্রিক দই বা ঘরে তৈরি দইয়ের সঙ্গে বেরি: নীরব উপকারে সক্রিয় প্রোবায়োটিক
দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক নিয়ে বহু গবেষণা ও আলোচনা রয়েছে। তবে সব দই সমান নয়। চিনিমুক্ত সাধারণ গ্রিক দই বা বাড়ির তৈরি টক দইয়ে থাকে প্রচুর প্রোটিন ও সক্রিয় জীবাণু, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক—আর এটাই লিভারে চর্বি কমানোর অন্যতম চাবিকাঠি।
এর সঙ্গে ব্লুবেরি বা স্ট্রবেরির মতো বেরি যোগ করলে মেলে পলিফেনল ও ভিটামিন সি, যা লিভার কোষের প্রদাহ ও স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
সপ্তাহে কয়েকবার এক ছোট বাটি দই ও বেরি হতে পারে এমন এক মৃদু অভ্যাস, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে সুস্থ রাখবে।
ফ্যাটি লিভার কোনো নিরব ব্যাধি নয়, বরং সচেতনতার অভাবে এটি ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক উপাদানগুলোকে যুক্ত করে এ রোগ থেকে মুক্তির পথ তৈরি সম্ভব। ডা. সওরভ শেঠির দেখানো এই চারটি হালকা খাবার কেবল স্বাস্থ্যবান নয়, বরং তারা শরীর ও মনেরও বন্ধু। তাই নিজের সুস্থতার জন্য আজ থেকেই শুরু হোক এই যত্নের অভ্যাস।
সূত্র:https://tinyurl.com/32z2xfru
Leave a Reply