সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতেই একটি বড় আর্থিক সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এটি ‘বিশেষ সুবিধা’ নামে চালু হচ্ছে, যা মূলত অতিরিক্ত অর্থপ্রদান বা ভাতা হিসেবেই ধরা যেতে পারে। এই সুবিধা কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে, অর্থাৎ জুলাই মাসের বেতনে সরকারি চাকরিজীবীরা এটি পাবেন। মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে এই অর্থ প্রদান করা হবে, যার হার গ্রেডভেদে ভিন্ন।
নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের বেতনের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ যুক্ত হবে। একইসঙ্গে পেনশনভোগী ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীরাও থাকছেন এই সুবিধার আওতায়। তবে কিছু শর্ত রয়েছে।
কারা কত হারে পাবেন?
সরকারি চাকরিজীবীদের জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ২০ পর্যন্ত শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে। এই স্কেলের ভিত্তিতে ‘বিশেষ সুবিধা’র হার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই ভাগে:
গ্রেড ১ থেকে ৯ পর্যন্ত: মূল বেতনের ১০ শতাংশ
গ্রেড ১০ থেকে ২০ পর্যন্ত: মূল বেতনের ১৫ শতাংশ
তবে কোনো কর্মচারীর বেতন খুব কম হলে যাতে সুবিধার অঙ্ক একেবারেই নামমাত্র না হয়, সেজন্য সর্বনিম্ন ‘বিশেষ সুবিধা’ নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৫০০ টাকা। এর আগে এ হার ছিল ১,০০০ টাকা। একইভাবে, পেনশনভোগীদের জন্য সর্বনিম্ন ‘বিশেষ সুবিধা’ নির্ধারিত হয়েছে ৭৫০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৫০০ টাকা।
উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক
একজন চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তার মূল বেতন ৭১,২০০ টাকা হলে তিনি পাবেন:
৭১,২০০ × ১০% = ৭,১২০ টাকা।
যেখানে আগের ৫% হারে তিনি পেতেন ৩,৫৬০ টাকা।
ফলে এবার তার আয় বাড়ছে ৩,৫৬০ টাকা।
একজন গ্রেড ১৬-এর কর্মচারীর মূল বেতন যদি হয় ১৭,৫২০ টাকা, তাহলে তিনি পাবেন:
১৭,৫২০ × ১৫% = ২,৬২৮ টাকা।
পূর্বে এই গ্রুপের কর্মচারীরা পেতেন ১,০০০ টাকা ‘বিশেষ সুবিধা’ হিসেবে।
ফলে এবার তাদের বেতন বাড়ছে ১,৬২৮ টাকা।
পেনশনভোগীদের জন্য নতুন নিয়ম
সরকারি পেনশনভোগীদের জন্যও রয়েছে এই ‘বিশেষ সুবিধা’। যাঁরা পেনশনের সম্পূর্ণ অংশ বা আংশিক পুনঃস্থাপন করেছেন, তাঁরা পেনশনের উপর নির্ধারিত হারে এই সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ, তাঁদের পেনশনের বর্তমান পরিমাণের উপর প্রযোজ্য হারে এই সুবিধা যুক্ত হবে।
তবে যাঁরা অবসরের সময় তাঁদের মোট পেনশন এককালীন তুলে নিয়েছেন এবং এখনো পুনঃস্থাপনের আওতায় আসেননি, তাঁদের এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরাও পেতে পারেন
যাঁরা সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত, এবং নিয়োগের পূর্বে তাঁরা একই স্কেলে কর্মরত ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সুবিধাটি প্রযোজ্য হবে শেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে। তবে যদি তিনি একই সঙ্গে একজন পেনশনভোগীও হন, সেক্ষেত্রে তিনি পেনশন বা শেষ বেতনের মধ্যে যেটি প্রযোজ্য হবে, সেটির ভিত্তিতে এই সুবিধা পাবেন।
PRL ও সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে
যাঁরা অবসর-উত্তর ছুটিতে (PRL) রয়েছেন, তাঁরা PRL-এ যাওয়ার পূর্বে যে মূল বেতন পেতেন, তার ভিত্তিতে এই সুবিধা পাবেন।
তবে যাঁরা বিনা বেতনে ছুটিতে রয়েছেন, তাঁরা এ সুবিধার আওতায় আসবেন না।
সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীরা বরখাস্ত হওয়ার আগের মূল বেতনের ৫০ শতাংশের উপর নির্ধারিত হারে সুবিধাটি পাবেন।
ব্যাংক, বীমা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্যতা
এই ‘বিশেষ সুবিধা’ কেবল কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্ত কর্মচারীদের জন্য নয়। জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫-এর আওতাভুক্ত যেসব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা রয়েছে, সেগুলোর কর্মচারীরাও এই সুবিধা পাবেন। তবে শর্ত হলো, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সুবিধার খরচ নিজস্ব বাজেট থেকে মেটাতে হবে। সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে অতিরিক্ত কোনো বরাদ্দ দেওয়া হবে না।
কেন এই বাড়তি সুবিধা?
মূলত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং দীর্ঘদিন ধরে বেতন কাঠামো অপরিবর্তিত থাকার কারণে সরকার এ ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময়েই এর আভাস পাওয়া যায়। সরকারি ব্যয় ও রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে কিছুটা নমনীয়তা আনার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এই ‘বিশেষ সুবিধা’ নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এই সুবিধা শুধু তাদের মাসিক আয়ে তাৎক্ষণিক স্বস্তিই দেবে না, বরং আগামী বছরগুলোতে ইনক্রিমেন্টের ভিত্তিতে প্রাপ্ত আয়েও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কর্মচারীদের মনোবল, কর্মউদ্দীপনা এবং রাষ্ট্রীয় সেবায় দায়িত্ববোধ আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।
Leave a Reply