এক সময় ভাবা হতো হার্টের অসুখ শুধু বয়স্কদেরই হয়। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন অল্প বয়সীদের মধ্যেও বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। সম্প্রতি সংগীতশিল্পী কেকে-এর মঞ্চে গান গাইতে গাইতে মৃত্যুর ঘটনা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক নৃত্যশিল্পীর স্টেজেই পড়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়—হৃদরোগ এখন বয়স দেখে আসে না।
এই উদ্বেগজনক বাস্তবতার পেছনে কী কারণ? কখন বুঝবেন আপনার বা কাছের কারও হার্টে সমস্যা হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. এস এম মালিক।
অল্প বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক কেন বাড়ছে?
ডা. মালিক বলছেন, বর্তমান সময়ে হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- অনিয়মিত ঘুম
- অতিরিক্ত স্ট্রেস ও মানসিক চাপ
- ধূমপান ও অ্যালকোহল
- বসে বসে কাজ করার অভ্যাস
- নিয়মিত এক্সারসাইজের অভাব
- অতিরিক্ত রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট, চিনি, লবণ ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার
- মোবাইল আসক্তি ও ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটির ঘাটতি
- স্থূলতা ও ইনসুলিন রেজিস্টেন্স
সব মিলিয়ে শরীরে ক্রনিক ইনফ্লামেশন তৈরি হয়, যা ধমনীতে ব্লক তৈরি করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোন লক্ষণে বুঝবেন হার্টে সমস্যা হতে পারে?
- বুক ধড়ফড় করা বা ব্যথা
- হালকা পরিশ্রমেই হাঁপ ধরা
- বুকের ব্যথা হাতে বা ঘাড়ে ছড়িয়ে পড়া
- মাথা ঘোরা বা চোখে ঝাপসা দেখা
- হঠাৎ ক্লান্তি, অবসাদ বা শ্বাস নিতে কষ্ট
- রাতে ঘুমের সময় দমবন্ধ লাগা বা জেগে উঠা
এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কী পরীক্ষা করাবেন?
30 বছর পার হলে বছরে অন্তত একবার নিচের পরীক্ষাগুলো করা উচিত:
- ECG (ইসিজি)
- ইকোকার্ডিওগ্রাম
- লিপিড প্রোফাইল
- ব্লাড সুগার ও HbA1c
- কিডনি ও লিভার ফাংশন
- থাইরয়েড
- প্রয়োজনে TMT বা সিটি এনজিওগ্রাফি
কী খাবেন, কী খাবেন না?
খাবেন:
✔ শাকসবজি, ফলমূল
✔ ওটস, ডালিয়া, হোলগ্রেইন
✔ বাদাম, বীজ
✔ লিন প্রোটিন (ডিম, মাছ, চর্বিহীন মাংস)
এড়িয়ে চলবেন:
✘ প্যাকেটজাত খাবার
✘ ফাস্ট ফুড
✘ বেশি লবণ, চিনি ও ভাজাপোড়া
✘ বারবার গরম করা তেলে রান্না
নিয়মিত এক্সারসাইজের ভূমিকা
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা
- প্রতি সপ্তাহে ৫ দিন অ্যারোবিক বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ
- এক্সারসাইজে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমে, ঘুম ভালো হয়, স্ট্রেস কমে
- হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয়
স্ট্রেস এবং ফিজিক্যাল ইনঅ্যাকটিভিটি
অফিসের ডেডলাইন, টার্গেট চাপ, রাত জেগে কাজ—এসবই হার্টের বড় শত্রু।
সারাদিনে কয়েক মিনিট হলেও হাঁটা, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা কিছু একটায় জড়িত থাকা জরুরি।
পরিবারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ
- ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করুন
- মোবাইল আসক্তি কমিয়ে খেলাধুলা ও বাইরের অ্যাকটিভিটিতে উৎসাহ দিন
- ঘুম ও পড়ার সঠিক রুটিন তৈরি করুন
- শিশুদের junk food না দিয়ে ঘরে তৈরি খাবারে অভ্যস্ত করুন
শেষ কথা
হার্ট অ্যাটাক এখন আর বয়স দেখে আসে না। তাই ২০ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভালো খাওয়া, ঘুম এবং এক্সারসাইজ—এই চারে মন দিন। আপনার ছোট সিদ্ধান্তগুলোই ভবিষ্যতে হৃদয় সুরক্ষার বড় ভিত্তি হতে পারে।
Leave a Reply