গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি একটি খুব সাধারণ সমস্যা, যার কারণে অনেকেই নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ—বিশেষ করে অ্যাসিড-নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ যেমন ওমেপ্রাজল, ইসোমেপ্রাজল, র্যাবেপ্রাজল ইত্যাদি গ্রহণ করেন। তবে দীর্ঘমেয়াদে এসব ওষুধ খাওয়ার রয়েছে কিছু গোপন ঝুঁকি, যা অজান্তেই শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
নিচে নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তালিকা দেওয়া হলো—
১. ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি
গ্যাসের ওষুধ পাকস্থলীর অ্যাসিড কমিয়ে দেয়, ফলে ভিটামিন B12, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের শোষণে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে হতে পারে—
🔹দুর্বলতা
🔹অবসাদ
🔹অ্যানিমিয়া
🔹হাড় ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস)
২. স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও মানসিক সমস্যা
নতুন কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) গ্রহণ করলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং ডিমেনশিয়া বা বিভ্রান্তির মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. পেটের সংক্রমণের ঝুঁকি
অ্যাসিডের কাজ শুধু হজম নয়, জীবাণু ধ্বংস করাও। অ্যাসিড কমে গেলে ক্লস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজেই হতে পারে, যা ডায়রিয়া, পেটব্যথা ও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা
গ্যাসের ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে। এতে হিপ ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. হৃদরোগের ঝুঁকি
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত PPI জাতীয় ওষুধ খেলে হৃদ্যন্ত্রের উপর চাপ পড়তে পারে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সামান্য বেড়ে যেতে পারে।
৬. কিডনি ক্ষতির সম্ভাবনা
নতুন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, দীর্ঘমেয়াদে গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, এমনকি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) পর্যন্ত হতে পারে।
কী করবেন?
🔹চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনও দীর্ঘমেয়াদে গ্যাসের ওষুধ খাবেন না।
🔹খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন—মসলাযুক্ত খাবার কমিয়ে, সময়মতো খাওয়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
🔹কখনোই নিজের মন মতো ওষুধ চালিয়ে যাবেন না। বিকল্প চিকিৎসা বা থেরাপির কথা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন।
গ্যাসের ওষুধ তাৎক্ষণিক আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি হতে পারে বিপদের কারণ। তাই সচেতন হোন, প্রয়োজন হলে বিকল্প চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Leave a Reply