“শিক্ষার কোনো বয়স নেই”—এই কথাটিকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার আব্দুল হান্নান। বয়স ৪৫ ছুঁয়েছে, তবুও থেমে থাকেননি শিক্ষা অর্জনের পথচলায়। এবার ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। অবাক করা বিষয় হলো, তার মেয়ে হালিমা খাতুনও একই সঙ্গে, ভিন্ন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
আব্দুল হান্নান জানান, ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও তিনি পাস করতে পারেননি। এরপর সংসার জীবনের বাস্তবতায় হারিয়ে যায় পড়ালেখার স্বপ্ন। দীর্ঘ ২৫ বছর পরে, ২০২৩ সালে তিনি রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তাও আবার গোপনে ভর্তি হয়ে মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে!
তার এ সাফল্যে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার টানলেও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমেনি কখনো। এখন তিনি সেই দোকান ভাড়া দিয়ে কৃষিকাজের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন তার শিক্ষার যাত্রা।
বর্তমানে তিনি বাঘা কাকড়ামারি কলেজ থেকে এবং মেয়ে হালিমা খাতুন গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আব্দুল হান্নান বলেন, “স্বপ্ন আছে, আমি আর আমার মেয়ে একসাথে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করব।”
আব্দুল হান্নান লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছোট ছেলে। তার পরিবারে স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। সংসার সামলে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার এ উদাহরণ আজ অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার নাম।
একই সঙ্গে একসাথে শিক্ষার আলোয় এগিয়ে চলা এই বাবা-মেয়ে যেন প্রমাণ করলেন, শেখার কোনো বয়স নেই—শুধু থাকতে হয় ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টা।
Leave a Reply