থাইরয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি যা গলার সামনের অংশে প্রজাপতির আকৃতিতে অবস্থান করে। এটি হরমোন নিঃসরণ করে শরীরের বিপাকক্রিয়া, বৃদ্ধি, শক্তি, হৃদ্স্পন্দন ও মনোভাবসহ বহু শারীরিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অনেকেই জানেন না—থাইরয়েড সমস্যার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। থাইরয়েড-সম্পর্কিত ব্যথা শুধু গলায় সীমাবদ্ধ নয়। নিচে তুলে ধরা হলো শরীরের এমন ৫টি অংশ, যেখানে থাইরয়েডজনিত ব্যথা হতে পারে—
১. গলার সামনের অংশ (থাইরয়েড এলাকা):
এটাই সবচেয়ে প্রচলিত ব্যথার স্থান। গলার সামনের অংশে, অ্যাডামস অ্যাপলের নিচেই থাইরয়েড গ্রন্থি অবস্থান করে। থাইরয়েডাইটিস (থাইরয়েড প্রদাহ), সংক্রমণ বা গ্রন্থিতে নডিউল হলে সেখানে ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা চাপ অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় গিলতে কষ্ট বা গলায় পূর্ণতার অনুভূতিও দেখা যায়।
২. গলা ও স্বরযন্ত্রের এলাকা:
থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান গলার কাছে হওয়ায় এর প্রদাহ বা স্ফীতি স্বরযন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে গলা ব্যথা, স্বর ভেঙে যাওয়া বা কথা বলতে ব্যথা অনুভূত হয়, যা অনেক সময় গলার ইনফেকশন ভেবে ভুল করা হয়।
৩. কাঁধ ও পিঠের ওপরের অংশ:
যদিও খুব সাধারণ নয়, তবুও কিছু ক্ষেত্রে থাইরয়েড সমস্যা বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে কাঁধ ও পিঠের ওপরের অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত মাংসপেশির দুর্বলতা, টান বা ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। অনেকেই কাঁধ তুলতে সমস্যা বা দুর্বলতা অনুভব করেন।
৪. সারা শরীরের গিঁট ও পেশিতে ব্যথা:
থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি শরীরের বিপাকক্রিয়া কমিয়ে দেয়, ফলে পেশি দুর্বল হয় ও গিঁটে ব্যথা দেখা দেয়। হাঁটু, উরু বা কোমরের মতো অংশে পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, জয়েন্টে ব্যথা বা ক্র্যাম্প সাধারণ লক্ষণ। হাইপোথাইরয়েড মায়োপ্যাথি নামের একটি অবস্থায় এই ব্যথা বিশেষভাবে অনুভূত হয়।
৫. বুক বা পাঁজরের চারপাশ:
কিছু ক্ষেত্রে থাইরয়েড সমস্যার কারণে বুক বা পাঁজরের চারপাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি সাধারণত হালকা চাপ বা ভারী লাগার মতো অনুভূতি দেয়। যদিও বুকের ব্যথা থাইরয়েড সমস্যার সাধারণ উপসর্গ নয়, তবে থাইরয়েড ক্যান্সার বা গুরুতর প্রদাহ ছড়িয়ে পড়লে এমনটি হতে পারে। তবে বুকের যেকোনো ব্যথাকেই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত, কারণ এটি হৃদ্রোগের লক্ষণও হতে পারে।
থাইরয়েডজনিত ব্যথা অনেক সময় গলার বাইরেও শরীরের নানা অংশে অনুভূত হতে পারে। যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলো থেকে থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। থাইরয়েড সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা করলে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
Leave a Reply