free tracking

ইনসুলিন ইনজেকশনের দিন শেষ? ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বৈপ্লবিক চিকিৎসা উদ্ভাবন!

টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য দীর্ঘদিনের দুঃসহ ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হতে পারে না আর—এমনই এক যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ গত ২০ জুন প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাত্র একবার শরীরে বিশেষভাবে তৈরি কোষ প্রবেশ করালেই অনেক রোগীর শরীর নিজেই ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ জন রোগীর মধ্যে

১০ জন চিকিৎসার এক বছর পর আর অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্রহণ করছেন না।

ল্যাবেই তৈরি ইনসুলিন কোষ

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনভিত্তিক কোম্পানি Vertex Pharmaceuticals এ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। গবেষণার সহ-লেখক এবং প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেলিসিয়া পাগলিউকা বলেন, ‘‘আমরা মানুষের স্টেম সেল থেকে ল্যাবে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ তৈরি করেছি।’’ এই কোষগুলো সরাসরি অগ্ন্যাশয়ে নয়, বরং যকৃতের আশপাশে ইনজেক্ট করা হয় এবং সেখানে গিয়েই এটি রক্তের সুগার মাত্রা বুঝে ইনসুলিন তৈরি শুরু করে।

এ পর্যন্ত ১৪ জন রোগীর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে চিকিৎসাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। যাদের ইনজেকশননির্ভর জীবন কাটছিল, তারা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন।

বিশ্বে ৮০ লাখ টাইপ-১ রোগী

টাইপ-১ ডায়াবেটিস এক ধরনের অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো ধ্বংস করে দেয়। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ইনসুলিন ছাড়া শরীর রক্তের শর্করাকে কোষে পৌঁছাতে পারে না, ফলে কোষে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়।

অতীতে ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্পের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা হতো, কিন্তু তা সবসময় নিখুঁতভাবে কাজ করে না। রক্তে সুগারের মাত্রা একটু বেশি বা কম হলেই হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

কীভাবে কাজ করে ‘জিমিসেলসেল’ থেরাপি?

নতুন থেরাপির নাম জিমিসেলসেল (zimislecel)। এতে রোগীর শরীরে ল্যাবে তৈরি কোটি কোটি ‘আইলেট কোষ’ প্রবেশ করানো হয়। কোষগুলো দ্রুত কাজ শুরু করে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বুঝে ইনসুলিন তৈরি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ জনের মধ্যে ১০ জন পুরোপুরি ইনসুলিন ছাড়াই জীবন যাপন করছেন। বাকি ২ জন ইনসুলিনের মাত্রা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে এনেছেন।

চ্যালেঞ্জ আছে, সম্ভাবনাও বিশাল

যদিও থেরাপিটি বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর, কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। চিকিৎসার পর দুজন অংশগ্রহণকারীর মৃত্যু হয়েছে—একজন অস্ত্রোপচারের জটিলতায় এবং অন্যজন আগে থেকেই মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ইমিউনো-সাপ্রেসিভ ওষুধ। শরীর যাতে নতুন কোষগুলোকে আক্রমণ না করে, সে জন্য রোগীদের এই ওষুধ নিয়মিত খেতে হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়াবেটিস গবেষক জিয়াকোমো লানজোনি বলেন, ‘‘এই থেরাপি সত্যিই যুগান্তকারী। তবে দীর্ঘমেয়াদী ইমিউনো-সাপ্রেশন ছাড়া এমন চিকিৎসা উদ্ভাবন করতে হবে।’’

২০২৬ সালে অনুমোদনের প্রত্যাশা

বর্তমানে এই থেরাপির আরও বিস্তৃত ট্রায়াল চলছে, যেখানে ৫০ জন রোগী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। Vertex আশা করছে, ২০২৬ সালের মধ্যে তারা এই চিকিৎসার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন পাবে।

সূত্র: https://www.sciencenews.org/article/type-1-diabetes-cell-therapy-insulin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *