যেকোনো বয়সে, যে কারও কিডনিতে পাথর হতে পারে। তবে পুরুষদের ঝুঁকি নারীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।
কিডনি মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে— শরীরের অপদ্রব্য ও বর্জ্য প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। কিন্তু নানা কারণে এই অঙ্গে পাথর জমে যেতে পারে, যা একদিকে যেমন অসহনীয় ব্যথার কারণ হতে পারে, তেমনি সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ কী?বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ হলো ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানিশূন্যতা। যখন শরীরে পানির ঘাটতি থাকে, তখন প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং তাতে দ্রবণীয় পদার্থ জমে পাথরের মতো কঠিন কণা বা ক্রিস্টাল তৈরি হয়।
বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় যারা কাজ করেন এবং নিয়মিত পানি পান করেন না, তাদের মধ্যে কিডনি পাথরের ঝুঁকি বেশি। এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
এছাড়া, প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকেও কিডনিতে পাথর হতে পারে। সংক্রমণের ফলে প্রস্রাবে সাইট্রেট, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংকের পরিমাণ কমে যায়— যা স্বাভাবিকভাবে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলেও পাথর গঠনের আশঙ্কা থাকে। কিডনি পাথরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ক্যালসিয়াম অক্সালেট দিয়ে তৈরি। কখনো কখনো ক্যালসিয়াম ম্যাগনেশিয়াম ফসফেট বা ক্যালসিয়াম অক্সালেট ফসফেট ধরনের পাথরও গঠিত হতে পারে।
দীর্ঘ সময় ধরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে, বিশেষ করে গেঁটে বাতের রোগীদের মধ্যেও কিডনিতে পাথর তৈরি হতে দেখা যায়।
প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত কার্যকারিতা বা হরমোন নিঃসরণও ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে কিডনিতে একাধিকবার পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিরোধের উপায় কী?প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে— অন্তত ২ থেকে ৩ লিটার।অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন খাওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে।প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে চিকিৎসা নিতে হবে দ্রুত।ক্যালসিয়াম বা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খাওয়া এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া উচিত।
কিডনিতে পাথর সাধারণ হলেও উপেক্ষা করার মতো নয়। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন, পর্যাপ্ত পানি পান এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্ত থাকা সম্ভব। কিডনির সুস্থতা মানেই শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা।
Leave a Reply