free tracking

জয় যেভাবে হাসিনার ক্যারিয়ার শেষ করে দিচ্ছেন!

“ঘরের শত্রু বিভীষণ”— কথাটির প্রাসঙ্গিকতা যেন ফিরে এসেছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়। পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি একাধিক বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দলের ভেতরেই বিভ্রান্তি, ক্ষোভ এবং ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন বলে গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সূত্রে দাবি উঠে। এরপর জয় বিভিন্ন মাধ্যমে জানান, তার মা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের পরিবার আর এই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবে না। এ বক্তব্যে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ মনোবল ভেঙে পড়ে বলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের দমন-পীড়ন নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়— ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হয়েছে শেখ হাসিনা নিজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অডিওটিতে কথিতভাবে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “যেখানেই পাবে, গুলি করবে।” এটি প্রকাশের পর দেশের রাজনীতিতে শুরু হয় উত্তাল প্রতিক্রিয়া।

প্রতিবেদনের জবাবে সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ফেসবুক পেজে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, এটি ২০১৬ সালের গুলশান হলি আর্টিজান হামলার সময়কার অডিও। তবে তার দাবি দ্রুতই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, কারণ অডিওতে ‘মোহাম্মদপুরে ছবি দেখে গ্রেপ্তার’, ‘হেলিকপ্টার থেকে গুলি’ ইত্যাদি প্রসঙ্গ উঠে আসে— যা হলি আর্টিজান ঘটনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

এরপর জয় তার পোস্ট মুছে দিয়ে দাবি করেন, অডিওটি আসলে এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পরে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেইজ থেকেও একই দাবি করা হয়— এটি একটি সাজানো ষড়যন্ত্র।

নেটিজেনরা প্রশ্ন তোলেন, একবার বলা হচ্ছে এটি ২০১৬ সালের অডিও, আবার বলা হচ্ছে এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি। কোনটা তাহলে সত্য?

তথ্য যাচাইকারী সংস্থাগুলোও বলছে, সরকার নিজেই এখন বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, জয় নিজেই পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন— অডিওতে থাকা কণ্ঠ তার মায়েরই।

শেখ হাসিনার রাজনীতির শেষ অধ্যায় যখন সামনে, তখন তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনের অসতর্ক মন্তব্য ও কৌশল রাজনৈতিকভাবে দলকে আরও চাপে ফেলছে বলে অনেকে মনে করছেন। জয়ের বক্তব্যে দলের মনোসংযোগ ও বার্তা উল্টোভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে, এবং তা হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, “এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বিপদ বিরোধী দল নয়, বরং অভ্যন্তরীণ অসামঞ্জস্য ও নেতৃত্ব সংকট।” আর নেট দুনিয়ার এক তিক্ত মন্তব্য: “এমন পুত্র থাকলে শত্রুর দরকার কী!”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *