free tracking

এক রাতেই বদলে গেল হাসিনার ইতিহাসের গতি!

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে সারাদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল গোটা দেশ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের আশা ছিল, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে হয়তো কোনো ইতিবাচক বার্তা আসবে। কিন্তু রাত নামতেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। শেখ হাসিনার বক্তব্যে, যেখানে তিনি বলেন “মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কেউ মেধাবী নয়, বরং রাজাকারদের নাতিপুতি হলেই মেধাবী হয়ে যায়”, সেই কথায় যেন আগুনে ঘি পড়ে। মুহূর্তেই সেই বাক্য ঘুরে বেড়াতে থাকে শিক্ষার্থীদের মাঝে—ভরপুর হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে।Share price prediction

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শুরু হয় উত্তেজনা। বিদ্যুৎবিহীন রাতে, বিজয় ৭১ হলে প্রথম ছড়িয়ে পড়ে নতুন এক স্লোগান— “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!”

ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের স্লোগানের ঠিক উল্টো সুরে এই স্লোগান যেন বিদ্রোহের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই আওয়াজ— এক হল থেকে আরেক হলে, এক শহর থেকে আরেক শহরে।

রোকেয়া হলে তালা ভেঙে বেরিয়ে আসেন ছাত্রীরা। থালা-বাসনের শব্দে জেগে ওঠে নীরব রাত। নারীদের নেতৃত্বেই আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। এক ছাত্রী বলেন,“আমরা নিজেরাই গিয়ে অন্যদের বের করে আনছিলাম। মেয়েরা রুম থেকে নেমে এসে হল ছেড়েছিল—এক অভূতপূর্ব ঘটনা।”

সেই রাতে মেয়েরা হয়ে উঠেছিল প্রতিরোধের প্রতীক। তাদের সাহস দেখে প্রেরণা পায় ছেলেরাও। সকাল হতেই ভিসি চত্বরে গর্জে ওঠে হাজারো শিক্ষার্থী।

তবে পরিস্থিতি দ্রুত ঘোলাটে হয়ে পড়ে। পরদিন সকালেই ছাত্রলীগ ও বহিরাগতদের দেখা যায় মধুর ক্যান্টিনের পাশে প্রস্তুতি নিতে। হলে হলে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখার চেষ্টা চলে। বিকেল নাগাদ ঢাবির আন্দোলনে অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ। বহু ছাত্রী আহত হন। আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীদের ওপরও চলে দ্বিতীয় দফার হামলা। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন,“যেটা যুদ্ধের নিয়মেও পড়ে না, সেখানেও এভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই রাতের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। দমন নীতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে সাধারণ মানুষ। আন্দোলন আর শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি—শিল্পী, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, দিনমজুর—সবাই যোগ দেন এই লড়াইয়ে। এটি পরিণত হয় এক বিশাল ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে।

এরপর আসে রক্তস্নাত দিন। আন্দোলনের ৩৬তম দিন—ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। রাইফেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অশ্রু ও সাহসের ছাপ রেখে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলে তরুণরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *