বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ইস্যুতে দায়ের করা একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। গতকাল (১৩ জুলাই) তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিনের আবেদন জানান। এ সময় তিনি মুখে মাস্ক ও বোরকা পরিহিত ছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান বলেন, এজাহারে অপু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অর্থ সরবরাহ বা সহিংস কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তিনি উল্লেখ করেন, একই মামলায় নুসরাত ফারিয়ার জামিনের নজির রয়েছে এবং মামলার বাদী ইতোমধ্যে হলফনামা দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন।
বিচারক অপুকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলতে অনুরোধ করলে তিনি মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলেন এবং হাসিমুখে থাকেন। এতে আদালতে উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবী বিদ্রূপ করে মন্তব্য করেন, “টাকার বিনিময়ে স্টেজে নেচে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এগিয়ে দিয়েছে — সে আবার হাসে!”
পরে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, “এই অপু বিশ্বাসরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। দেশের রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতিতে তারাও দায়ী।” এমন মন্তব্যের পর অপু বিশ্বাস নিজেই বলেন:“আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয়ের কারণে অনেক কিছু করতে হয়েছে। রাজনীতি বুঝি না, করিও না, করতেও চাই না।”
এই বক্তব্যে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের অনেকে হেসে বলে ওঠেন, “আহা আহা সাধু!”
অপু বিশ্বাস বলেন, “আমি সংসদ সদস্য হতে চাইনি। আমি শুধু একজন অভিনেত্রী। আমাকে যা পোশাক দেওয়া হয়, তাই পরে অভিনয় করি। সেসময় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম, পারিবারিক সমস্যায় ভুগছিলাম। আমার একটা ছোট বাচ্চা আছে।” বক্তব্য দেওয়ার সময় তার চোখ ছলছল করছিল।
শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় অপু বিশ্বাসের জামিন মঞ্জুর করেন, যা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর আগে, গত ২ জুন উচ্চ আদালত থেকে তিনি ৬ সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছিলেন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে এনামুল হক নামে এক আন্দোলনকারী আহত হন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩০০-৪০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অপু বিশ্বাস ২০৮ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।
Leave a Reply