অবশেষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের প্রস্তাব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই বেতন গ্রেড উন্নীত করতে বছরে সরকারের অতিরিক্ত ৩৪১ কোটি ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪০ টাকা খরচ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রস্তাবনা ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া: সূত্র বলছে, ডিপিই কর্তৃক পাঠানো প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশনস) মোহাম্মদ কামরুল হাসান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, “গতকাল রোববার প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন হলে রিটকারী ৪৫ জন শিক্ষক ছাড়াও অন্য সব প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড উন্নীত করা সম্ভব হবে।” কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে—এমন প্রশ্নে কামরুল হাসান বলেন, ‘দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬৫ হাজার ৫০২টি, যার মধ্যে বর্তমানে ৩২ হাজার ৩৫২ জন কর্মরত রয়েছেন। এই শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের দাবি দীর্ঘদিনের।
গত ১৯ জুন উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন বিদ্যমান গ্রেড ১১ থেকে ১০-এ উন্নীত করে অফিস আদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ জুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের (প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত) দশম গ্রেডে উন্নীত করতে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে অফিশিয়াল গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট শিক্ষকদের পক্ষে রায় দেন, যা এই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। সেদিনই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও পরে মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১তম ও অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করে। এই সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করেন।
Leave a Reply