ত্বকের ক্যান্সার বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারের ধরনগুলোর একটি। এটি তখনই হয় যখন ত্বকের টিস্যুতে ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সারজনিত) কোষ তৈরি হয়। এই ক্যান্সারের পেছনে যেমন জেনেটিক কারণ থাকতে পারে, তেমনি বছরের পর বছর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে অতিরিক্ত এক্সপোজারও একটি বড় কারণ হতে পারে।
প্রাথমিক অবস্থায় ত্বকের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সাধারণ ত্বকের সমস্যার মতোই মনে হয়, যার ফলে অনেকেই বিষয়টি অবহেলা করেন। কিন্তু শুরুতেই যদি লক্ষণ চেনা যায়, তাহলে চিকিৎসা সহজ হয় এবং সুস্থতার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। নিচে ত্বকের ক্যান্সারের এমনই ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো অনেক সময় চোখ এড়িয়ে যায়:
১. খসখসে, আঁশযুক্ত প্যাচ বা দাগ:
বেসাল সেল কার্সিনোমা নামক ত্বকের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে শুকনো বা আঁশযুক্ত প্যাচ, যা দেখতে অনেকটা শুষ্ক ত্বক বা আঁচিলের মতো লাগে। এগুলো বাদামি, লালচে কিংবা ত্বকের রঙের মতো হতে পারে এবং সাধারণ লোশন বা ক্রিমে সারে না। এগুলোর টেক্সচার সাধারণত খসখসে বা শক্ত হয় এবং সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মুখ, ঘাড় বা হাতে—যেখানে সূর্যের আলো বেশি লাগে।
২. বারবার চুলকানি বা জ্বালাভাব হওয়া:
ত্বকে যদি দীর্ঘ সময় ধরে লালচে প্যাচ থাকে এবং তা চুলকায় বা জ্বলে, এবং সাধারণ চিকিৎসায় সারছে না, তাহলে তা ত্বকের ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক সময় এটি ইকজিমার মতো মনে হয়, কিন্তু বাস্তবে ত্বকের নিচে ক্যান্সার কোষ তৈরি হলে ইমিউন সিস্টেমে প্রদাহ দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা সাধারণত এমন প্যাচ কয়েক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করেন সঠিক নির্ণয়ের জন্য।
৩. চকচকে, মুক্তার মতো ছোট ফোলা দাগ:
বেসাল সেল কার্সিনোমা আরেকভাবে দেখা দেয় ছোট, চকচকে ও মুক্তার মতো ফোলায়। এই ছোট ফোলাগুলো দেখতে মোমের ফোঁটার মতো, যা অনেক সময় স্বাভাবিক ত্বকের দাগের মতোই মনে হয়। এর মধ্যে ছোট ছোট রক্তনালীও দেখা যেতে পারে এবং এগুলো সাধারণত নাক, কান ও কপালের মতো সূর্য-আক্রান্ত জায়গায় দেখা যায়।
৪. না শুকানো বা বারবার ফিরে আসা ক্ষত:
ত্বকে যদি এমন ক্ষত হয় যা বারবার রক্ত পড়ে বা শুকালেও বারবার ফিরে আসে, তাহলে তা হতে পারে স্কোয়ামাস সেল বা বেসাল সেল কার্সিনোমার লক্ষণ। এই ধরনের ক্ষত সাধারণত কয়েক সপ্তাহেও সারে না এবং বিশেষ করে সূর্যের আলো লাগে এমন স্থানে বেশি দেখা দেয়। এমন ক্ষত দেখা দিলে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. তিলের আকৃতি, রঙ বা গঠনের পরিবর্তন:
মেলানোমা নামক ত্বকের সবচেয়ে মারাত্মক ক্যান্সারের লক্ষণ হলো তিলের পরিবর্তন। যদি কোনো তিল আকৃতিতে অসমান হয়ে যায়, তার সীমানা অস্পষ্ট হয়, রঙ একাধিক রকম হয়, ৬ মিলিমিটারের বেশি বড় হয়, কিংবা হঠাৎ করে চুলকানো বা রক্ত পড়া শুরু করে, তাহলে তা সতর্কতার ইঙ্গিত হতে পারে।
এই লক্ষণগুলো মনে রাখার জন্য “ABCDE” নিয়ম অনুসরণ করা যায়: A – Asymmetry (অসমতা), B – Border irregularity (সীমানার অস্পষ্টতা), C – Color variation (রঙের বৈচিত্র্য), D – Diameter over 6mm (৬ মিমি-র বেশি ব্যাস), E – Evolution (পরিবর্তন বা বৃদ্ধি)।
নতুন কোনো তিল হঠাৎ করে দেখা দিলে বা পুরোনো তিলে পরিবর্তন হলে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
Leave a Reply