মানুষ যেসব কারণে টাকা জমায় তার একটি বড় কারণ হলো—বিপদের দিনে যেন সেই টাকা কাজে লাগে। উন্নত দেশগুলোতে এই ঝুঁকি মোকাবেলায় মানুষ বেছে নেয় বীমা। বাংলাদেশেও রয়েছে অসংখ্য জীবন ও সাধারণ বীমা কোম্পানি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সব কোম্পানিই কি বিশ্বস্ত? কোথায় বীমা পলিসি খুললে আপনি আর্থিক সুরক্ষা পাবেন, আর কোথায় ঠকে যাবেন?
বীমা আসলে কী?
বীমা হলো একটি আইনসম্মত চুক্তি, যেখানে আপনি নির্ধারিত প্রিমিয়াম প্রদান করলে নির্দিষ্ট সময় পরে কিংবা বিপদের সময় কোম্পানি আপনাকে ক্ষতিপূরণ দেয় বা আর্থিক সহায়তা করে।
জীবন বীমা: মৃত্যু পরবর্তী আর্থিক সুরক্ষা
সাধারণ বীমা: দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, মালামাল ইত্যাদি সুরক্ষা
বীমা করার আগে যা জানা জরুরি:
এজেন্ট নয়, কোম্পানি দেখুন:
অনেকেই এজেন্টের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে বীমা করেন। কিন্তু বীমা পলিসি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী একটি আর্থিক চুক্তি। তাই এজেন্টের কথা নয়, কোম্পানির বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন।
বীমা দাবি পরিশোধের হার:
যেসব কোম্পানির দাবি পরিশোধের হার বেশি (৯৫% এর বেশি), সেসবই নিরাপদ। এই তথ্য পাবেন কোম্পানির ওয়েবসাইট বা আইডিআরএ (IDRA) এর ওয়েবসাইটে।
কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য ও পরিচালনা পর্ষদ:
পরিচালকেরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি কিনা বা কোম্পানিটি নিয়মিত অডিট হয় কিনা, তা যাচাই করুন।
ডিজিটাল লেনদেন সুবিধা আছে কিনা:
বিশ্বাসযোগ্য বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম গ্রহণ ও দাবি পরিশোধে ব্যাংক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে। এতে প্রতারণার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
নির্ভরযোগ্য অফিস লোকেশন ও সরাসরি যোগাযোগ:
কোম্পানির শাখা অফিস কোথায়, সেখানে নিয়মিত টাকা জমা দেওয়া যায় কি না—সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এজেন্টের মাধ্যমে লেনদেন না করাই ভালো।
ভুল যেভাবে ঠেকাতে পারেন:
পলিসির শর্তাবলী নিজে ভালোভাবে পড়ুন।
“ডাবল টাকার প্রলোভন”, “গ্যারান্টি লাভ” ইত্যাদি শুনলে সতর্ক হোন।
প্রথম দুই-তিন কিস্তির পর প্রিমিয়াম জমা দেয়ার দায়িত্ব নিজের হাতে নিন।
মনে রাখবেন:
বীমা সঞ্চয় নয়, এটি ঝুঁকি ভাগাভাগি করার একটি মাধ্যম।
২-১ কিস্তি দিয়ে পলিসি বন্ধ করলে আপনি টাকা ফেরত পাবেন না।
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়মিত প্রিমিয়াম না দিলে বীমা ভঙ্গ হয়ে যায়।
সঠিকভাবে বীমা করলে কী লাভ?
মৃত্যুর পর পরিবার আর্থিক সুরক্ষা পাবে
দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় চিকিৎসা খরচের জন্য সহায়তা
মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফাসহ টাকা ফেরত
ব্যবসা বা মালামালের ঝুঁকি কমানো যায়
বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্ত। সঠিক কোম্পানি এবং সঠিক পরিকল্পনায় বীমা করলে বিপদের দিনে আপনি ও আপনার পরিবার পাবে নির্ভরতার আশ্রয়। তাই চোখ বন্ধ করে নয়, তথ্য যাচাই করে তবেই বীমা করুন।
Leave a Reply