
রাতারাতি যে কাউকে জনপ্রিয় করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে সমাজমাধ্যমের। হঠাৎ করেই নেটাগরিকদের নয়নের মণি হয়ে ওঠা সম্ভব। কাউকে নিয়ে মুহূর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে চর্চা। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ অর্চিতা ফুকন।

সমাজমাধ্যমে কেউ জনপ্রিয় হন নিজগুণে। ভাল গান, নাচ বা অন্য কোনও প্রতিভার প্রদর্শন করে। আবার অনেকে ভাইরাল হন অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে। অনেকে আবার রিল বানিয়ে রাতারাতি নেটাগরিকদের চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।

অসমের কন্যা বলে পরিচিত অর্চিতার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। সমাজমাধ্যমে ‘বেবিডল অর্চি’ নামে পরিচিত নেটপ্রভাবী সম্প্রতি কেট লিনের ‘ড্যাম উন গ্র’ গানে রিল বানিয়ে জনপ্রিয় হন।

সেই রিল ভাইরাল হওয়ার পরেই দেশ জুড়ে তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তিনি কে তা নিয়ে খোঁজখবর চালাতে শুরু করেন নেটাগরিকেরা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যাও হু হু করে বাড়তে থাকে।

সুন্দরী বলতে যা বোঝায়, অর্চিতা ঠিক তা-ই। চেহারাতেও লাস্য রয়েছে। সমাজমাধ্যমে মূলত রিল এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যাও অনেক।

যে ইনস্টাগ্রাম রিলটি অর্চিতাকে আকস্মিক খ্যাতি এনে দিয়েছিল সেখানে দেখা গিয়েছে, ‘ড্যাম উন গ্র’ গানে একটি সাধারণ পোশাক থেকে একটি আকর্ষণীয় শাড়ি পরে ‘ট্রানজ়িশন’ ভিডিয়ো বানিয়েছেন তিনি।

ভিডিয়োটি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয় সেটি। লক্ষ লক্ষ বার দেখা হয় সেই রিল। অর্চিতাকে নিয়ে নেটাগরিকদের কৌতূহলের সূত্রপাতও সেই থেকে। ‘খোঁজ খোঁজ’ রব পড়ে তাঁকে নিয়ে।

রিল ভিডিয়ো পোস্ট করে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি অন্য এক কারণেও সমাজমাধ্যমে ঝড় তুলেছিলেন অর্চিতা। অর্চিতা নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে আমেরিকার পর্ন তারকা কেন্দ্রা লাস্টের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করা হয় তাঁর। তাঁর কয়েকটি সাহসী ছবি এবং ভিডিয়োও পোস্ট করা হয় সেই অ্যাকাউন্ট থেকে।

আমেরিকার জনপ্রিয় পর্নতারকার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে অর্চিতা লিখেছিলেন, ‘‘প্রথম বার কেন্দ্রার সঙ্গে দেখা হওয়া একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আমি তাঁর আত্মবিশ্বাস, পেশাদার মনোভাব এবং সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত। এ রকম একজনের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। ওঁর কাছ থেকে শেখার সুযোগ পেয়েও কৃতজ্ঞ।’’

অসমের কন্যার সঙ্গে আমেরিকার দুষ্টু তারকার সেই অপ্রত্যাশিত জুটি দেখে নেটাগরিকদের অনেকেই তাৎক্ষণিক ভাবে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। অনেক প্রশ্নও ভিড় করেছিল অনুরাগীদের মনে। অনেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন, তা হলে কি আমেরিকার পর্ন দুনিয়ায় নাম লিখিয়েছেন অর্চিতা? বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে যায়।

এর পর পরই অর্চিতার কয়েকটি দুষ্টু ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে। যদিও নেটাগরিকদের একাংশ প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন। কেউ কেউ অর্চিতাকে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স) নেটপ্রভাবী বলেও দাবি করছিলেন। তবে নেটপ্রভাবীকে নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর অবশেষে মিলেছে। সমাধান হয়েছে রহস্যের।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় অসমের ডিব্রুগড়ে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই যুবকের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে অর্চিতার নামে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখান থেকে ভুয়ো বা এআই-সৃষ্ট ‘মর্ফ’ করা ছবি আপলোড করার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্তের নাম প্রতিম বোরা। তিনসুকিয়ার বাসিন্দা প্রতিম নেটপ্রভাবী অর্চিতার প্রাক্তন প্রেমিক। সম্মানহানি এবং হয়রানির জন্যই প্রাক্তন প্রেমিকার নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে আপত্তিকর বিষয় পোস্ট করেছিলেন প্রতিম। তেমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।

অভিযোগ, বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অর্চিতার নামের ভুয়ো প্রোফাইলটি পরিচালনা করছিলেন প্রতিম। নিয়মিত আপত্তিকর পোস্টও করছিলেন। পরে অর্চিতার ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে ডিব্রুগড় থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অর্চিতা দাবি করেছেন, কেন্দ্রা লাস্টের সঙ্গে তাঁর যে ছবি পোস্ট করা হয়েছিল তা ভুয়ো এবং ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকেই পোস্ট করা হয়েছিল। নেটপ্রভাবী আরও জানিয়েছেন, প্রতিম যে তাঁর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ইনস্টাগ্রামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তা তিনি জানতেন না। বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতেরা ‘মর্ফ’ ছবিগুলি দেখে তাঁকে বিষয়টি জানান।

পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করেছিলেন প্রতিম। কিন্তু তাঁর ফোন ট্র্যাক করে তাঁকে খুঁজে বার করে পুলিশ। অসমের সাইবার অপরাধ দমন শাখার এক কর্তা সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমরা আইপি অ্যাড্রেস ডেটা এবং প্রযুক্তিগত প্রমাণ ব্যবহার করে অভিযুক্তকে খুঁজে বার করি। তিনসুকিয়ার একটি ভাড়াবাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর ফোন এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’’

পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন প্রতিম। তিনি জানিয়েছেন যে, অর্চিতার পুরনো ছবি সংগ্রহ করে তা বিকৃত করে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছিলেন তিনি। অর্চিতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর রাগ এবং মানসিক হতাশা থেকে তিনি ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেও নাকি স্বীকার করে নিয়েছেন প্রতিম।

ভারতীয় ন্যায় সংহিতার প্রাসঙ্গিক ধারায় প্রতিমের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন এবং শীঘ্রই তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে বলেও রবিবার পুলিশ জানিয়েছিল।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই অর্চিতা-কেন্দ্রা রহস্যের সমাধান হয়েছে। এই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। পাশাপাশি, অর্চিতা যে এআই-সৃষ্ট নন, রক্তমাংসের মানুষ, তা জেনেও তাঁর অনুরাগীদের একাংশের আনন্দের সীমা নেই।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে অর্চিতার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছিল, ছ’বছর তিনি যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে স্বাধীনতা ‘কিনে’ সেই জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন তিনি। তবে তিনি সেই টাকা কাকে দিয়েছিলেন বা কী ভাবে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল তা নিয়ে কখনও খোলসা করে জানানো হয়নি।
ছবি: সংগৃহীত।
Leave a Reply