বাংলাদেশের ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের পথে হাঁটছে সরকার। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ছয় শ্রেণির নির্দিষ্ট দলিল চিরতরে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত ভূমি খাতের দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, প্রতারণা ও ট্যাক্স ফাঁকি প্রতিরোধে এই সিদ্ধান্ত এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকার ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী স্ক্যান ও অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে জমির দলিল যাচাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে কিছু ধরনের দলিল প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। তাই নির্দিষ্ট ৬ শ্রেণির দলিল একযোগে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, হেবা বা দানপত্র দলিলের ক্ষেত্রে শুধু রক্তসম্পর্কীয় ১৪ শ্রেণির মধ্যেই দান বৈধ বলে বিবেচিত হবে। অন্যদেরকে দেওয়া দানপত্রগুলো অবৈধ হিসেবে বাতিল হবে। এতে জমি দখলের মাধ্যমে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া চক্র ভেঙে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, ওসিয়তনামা বা উইলের ক্ষেত্রেও আইনি সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তির ওপর উইল করা যাবে, তাও যদি ওসিয়তপ্রাপ্ত ব্যক্তি পরিবার বা ওয়ারিশের বাইরে হয়। এসব শর্ত পূরণ না হলে ওসিয়ত দলিলও বাতিল বলে গণ্য হবে।
তৃতীয়ত, রেজিস্ট্রেশনবিহীন দলিল যেগুলো শুধু মহুরি বা কবির সিল দিয়ে তৈরি, কিন্তু সরকারিভাবে নিবন্ধিত নয়, সেগুলোও বাতিল করা হবে। এসব দলিল সরকারি অনুশাসন না মানায় কোনোভাবে বৈধতা পাবে না।
চতুর্থত, দেশে প্রচলিত জাল দলিল সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা ঠেকাতে স্ক্যানিং ও যাচাইয়ের মাধ্যমে চিহ্নিত দলিলগুলো বাতিল করা হবে। ভুক্তভোগীরা চাইলে আদালতের মাধ্যমে তাদের জমির মালিকানা ফিরে পেতে পারবেন।
পঞ্চমত, রাজনৈতিক প্রভাব বা প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি লিখে নেওয়া দলিলগুলোও বাতিল হবে। এমন দলিলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রকৃত মালিকদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।
শেষত, যেসব ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পত্তিতে নিজের অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করা হয়েছে, সেই দলিলগুলো বাতিল করা হবে। এতে করে অন্যান্য অংশীদারদের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে।
এছাড়া এই উদ্যোগ সরকারের ডিজিটাল ভূমিসেবা বাস্তবায়নের অংশ। দলিল যাচাই, নামজারি ও জমি মালিকানা নিয়ে বিরোধ কমাতে এবং ভূমি খাতে স্বচ্ছতা আনতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply