আধুনিক জীবনযাত্রা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার অভ্যাসের ফলে পেটে চর্বি জমার সমস্যা এখন অনেকের কাছেই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু দেখতে খারাপ লাগে না, বরং শরীরের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেক সময় সুষম খাদ্য গ্রহণ বা নিয়মিত ব্যায়াম করেও এই চর্বি সহজে কমে না।
পেটে অতিরিক্ত মেদ জমলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্থূলতার মতো নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে এমন কিছু ভিটামিন আছে, যেগুলোর অভাব হলে পেটে চর্বি জমার প্রবণতা বেড়ে যায়। আবার এসব ভিটামিন নিয়মিত গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে মেদ কমানো সম্ভব।
ভিটামিন এ:
ভিটামিন এ চর্বি বিপাকের জন্য অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন এ-এর অভাব শরীরের চর্বি, বিশেষ করে ভিসারাল ফ্যাট (পেটের ভেতরের চর্বি) বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত।
ভিটামিন ডি:
ভিটামিন ডি-এর অভাব স্থূলতা এবং পেটের মেদ বৃদ্ধির সাথে যুক্ত। এটি লেপটিন নামক হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে, যা ক্ষুধা এবং চর্বি জমা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে এবং ওজন বাড়তে পারে। ভিটামিন ডি সরাসরি মেদ পোড়ানোর কাজ না করলেও, এটি পেশি শক্তিশালী করে এবং হরমোন ব্যালান্স রাখার মাধ্যমে চর্বি জমা রোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি আছে, তাদের পেটে মেদ জমার প্রবণতা বেশি।
প্রাকৃতিক উৎস:
*সকালবেলা ১৫–২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা।
*দুধ, ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। তবে মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ না করাই ভালো।
ভিটামিন সি:
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের বিপাকক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন সি রাখলে পেটের মেদ কমতে শুরু করে।
ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ কিছু খাবার: লেবু, কমলা, পেয়ারা, স্ট্রবেরি।
সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে হমজ শক্তি উন্নত করে, শরীরের টক্সিন দূর করে এবং মেদ ঝরাতে সহায়তা করে।
ভিটামিন বি-১২:
এই ভিটামিন চর্বি বিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে, বিশেষ করে পেটের অংশে। ভিটামিন বি-১২ শরীরের শক্তি বাড়িয়ে বিপাকক্রিয়া সক্রিয় রাখে। ফলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি সহজে গলে যায়।
প্রাকৃতিক উৎস: ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম দুধে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে তা শুধু মেদ কমাতেই নয়, সারা দিন উদ্যমী রাখতেও সাহায্য করে।
মূল কথা: শুধু ভিটামিন নয়, জীবনযাপনেও পরিবর্তন দরকার
শুধু ভিটামিন গ্রহণ করলেই পেটের মেদ কমে যাবে, এমনটা ভাবা ভুল। এ জন্য প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত পানি পান, ঘুম ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি এড়িয়ে চলা।
উল্লেখ্য, আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে ওজন কমানোর চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে একবার নিজের ভিটামিন লেভেল পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। কারণ, পুষ্টির ঘাটতি অনেক সময়ই আপনার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।
সূত্র: বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট
Leave a Reply