বিবেকের তাড়নায় রংপুরে আ.লীগ-ছাত্রলীগের দুই শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ!

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। হামলার ঘটনাকে ‘নৃশংস’ উল্লেখ করে পদত্যাগ করছেন তারা। গত মঙ্গলবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর পর এই ঢেউ লেগেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল থেকে থেকে বুধবার (১৭ জুলাই) মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করেছেন তারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তারিকুর রহমান মুবিন, ফজলে রাব্বি, যুগ্ম সম্পাদক পিয়াস, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ আরিফ, উপ-তথ্য গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আরিফুজ্জামান আরিফ, সহ-সম্পাদক মাথিন লোহানী ও সম্পাদক মো. আল-আমিন মিয়া, উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর সরকার, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রাজন আহমেদ, উপপাঠাগার সম্পাদক শাহিন ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ ঋয়ানসহ অনেক নেতাকর্মী।

সহ-সম্পাদক মো. আল আমিন মিয়া লেখেন, ‘আমি মো. আল আমিন মিয়া। আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসম্পাদক পদে আছি। আমি আমার বিবেকের কাছে লজ্জিত হয়ে আমার ছাত্রলীগের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলাম। এখন থেকে ক্যাম্পাসের কোনো রাজনীতির সঙ্গে আমি আর যুক্ত নই।’

কোটা আন্দোলন ও ছাত্রলীগ ইস্যুতে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র
বেরোবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ আরিফ নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‌‘আজকের ঘটনা আমার আদর্শ বহির্ভূত, তাই আমি সব ধরনের রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।’

সহসভাপতি ফজলে রাব্বি লেখেন, ‘আমি এক কুলাঙ্গার, ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম।’

পিয়াস লেখেন, ‘আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’

এদিকে রংপুর আইএইচটি (১৮-১৯) ব্যাচের ফারজানা আক্তার নওরিন আইএইচটি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

আলপনা আক্তার রিতু গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। নিজের ফেসবুক আইডি থেকে তিনি লিখেছেন, ‘আল্লাহ সবাইকে হেফাজত কর। আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়, এসব আর সহ্য হচ্ছে না। আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নই, কিন্তু বঙ্গবন্ধু যদি আমাদের জাতির পিতা হয়ে থাকে তাহলে তো আমরা সবাই তার সন্তান তাহলে কেন সেখানে কোটার বৈষম্য থাকবে? কোটা সংস্কার করা হোক।’

গত দুইদিনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে অনেকের পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে। যদিও এ নিয়ে দলীয় নেতারা কথা বলতে নারাজ।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সংঘর্ষে নিহত হন আবু সাঈদ।

উল্লেখ্য, চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। মঙ্গলবার সেই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে আজ সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *