free tracking

হার্ট অ্যাটাক নয়,একেবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে: কেন বাড়ছে তরুণদের মৃত্যুঝুঁকি?

সবে তো জীবন শুরু হয়েছিল কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কেউ অ্যাথলেট, কেউবা তরতাজা করপোরেট পেশাজীবী। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় ছিল না, শরীর স্বাস্থ্যবান, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ নেই। অথচ ঠিক সেই মানুষগুলো হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, হার্ট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এমন ঘটনা এখন বারবার ঘটছে, আর সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো—বয়স ৪০-এর নিচে!

একসময় এমন মৃত্যু ছিল বিরল। কিন্তু এখন তা ক্রমেই সাধারণ হয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে তরুণ, সুস্থ-দেখা মানুষরা হঠাৎ করে কেন মারা যাচ্ছেন? আমরা কি আগে থেকেই কোনো সতর্কতা বুঝে নিতে পারি?

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মানে কী?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তখন, যখন হার্ট হঠাৎ করে পুরোপুরি থেমে যায় অথবা এত দ্রুত স্পন্দন করতে থাকে যে রক্ত আর শরীরের ভেতর ঘুরতে পারে না। এতে মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন পোঁছায় না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে, যদি সঙ্গে সঙ্গে CPR বা বৈদ্যুতিক শক না দেওয়া হয়।

অনেকে একে হার্ট অ্যাটাক মনে করেন, কিন্তু এটি একেবারেই আলাদা। হার্ট অ্যাটাকে হার্টে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়। আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে সমস্যা হয় হার্টের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায়, যা হার্টের স্পন্দন একদম থামিয়ে দিতে পারে।

কেন তরুণদের মধ্যেই এখন বেশি ঘটছে?
১. অজানা জন্মগত বা জেনেটিক হার্টের সমস্যা
অনেক তরুণ জানেনই না, তারা জন্মগতভাবে এমন একটি হার্ট সমস্যা নিয়ে বড় হচ্ছেন, যা হঠাৎ কোনো চাপের মুখে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যেমন: করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি, লং কিউটি সিনড্রোম ইত্যাদি সবই হার্টকে দুর্বল করে দেয়।

২. অনিয়মিত জীবনধারা ও খারাপ খাদ্যাভ্যাস
প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি, কম ঘুম, বসে থাকা জীবনযাপন এসব মিলিয়ে তরুণ বয়সেই অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ও কোলেস্টেরলে আক্রান্ত হচ্ছেন, যেগুলো হার্টের বড় শত্রু।

৩. অতিরিক্ত ক্যাফেইন, এনার্জি ড্রিংক বা মাদকের ব্যবহার
বর্তমানে তরুণদের মাঝে এনার্জি ড্রিংক, অতিরিক্ত কফি, সাপ্লিমেন্ট কিংবা রিক্রিয়েশনাল ড্রাগের ব্যবহার বেড়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক কিছু হার্টের স্বাভাবিক স্পন্দনে বিঘ্ন ঘটায়, ফলে হঠাৎ করেই ঘটে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

৪. কোভিড-পরবর্তী জটিলতা
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯ ভাইরাস অনেক সময় হার্টের টিস্যুতে প্রদাহ তৈরি করে। এমনকি হালকা সংক্রমণের পরেও এই প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে থেকে যেতে পারে। এর ফলেই দেখা দিতে পারে হার্টের ব্লক বা মায়োকার্ডাইটিস।

৫. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস, মানসিক চাপ, অবসাদ সবকিছু মিলে ধীরে ধীরে শরীরের মধ্যে একধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, ইনফ্লেমেশন—সবই হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। এমনকি শুধু মানসিক চাপ থেকেও হতে পারে “স্ট্রেস-ইনডিউসড কার্ডিওমায়োপ্যাথি”।

৬. অতিরিক্ত ব্যায়াম, কিন্তু পর্যবেক্ষণ ছাড়াই
অনেক তরুণ মনে করেন, বেশি ব্যায়াম মানেই ভালো স্বাস্থ্য। কিন্তু যদি কারও শরীরে অজানা কোনো হার্ট সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত কসরতই হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুর কারণ।

আগে থেকে কী লক্ষণে সতর্ক হবেন?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অনেক সময় হঠাৎ ঘটে, কিন্তু তার আগে শরীর কিছু বার্তা দেয়। যেমন:

ব্যায়ামের সময় বা পরে বুক ধড়ফড় করা বা ব্যথা

অল্পতেই শ্বাসকষ্ট হওয়া

বুকের মধ্যে হঠাৎ ধকধক বা ফড়িং-এর মতো কাঁপুনি

মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপক্রম

অস্বাভাবিক ক্লান্তি, বিশেষ করে ব্যায়ামের পরে

পরিবারে কারও হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ইতিহাস

কী করলে হার্টের ঝুঁকি কমানো সম্ভব?
১. নিয়মিত হার্ট চেকআপ করুন
পরিবারে যদি হার্ট সমস্যার ইতিহাস থাকে, তাহলে অন্তত একবার ইসিজি বা ইকোকার্ডিওগ্রাম করিয়ে রাখুন।

২. খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমে গুরুত্ব দিন
পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি, প্রতিদিন হাঁটা বা ব্যায়াম, এবং ঠিকমতো ঘুম সবই হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

৩. এনার্জি ড্রিংক ও উত্তেজক সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে চলুন
শরীরচর্চার জন্য যেসব প্রোডাক্ট বা পানীয় নিচ্ছেন, সেগুলোর উপাদান সম্পর্কে সচেতন হোন। অনেক পণ্যে এমন উপাদান থাকে যা হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৪. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন
আপনার মানসিক চাপ যত বেশি, হার্ট তত বেশি বিপদে। মেডিটেশন, কাউন্সেলিং, নিজের জন্য কিছু সময়—এসব চর্চা আপনার হার্টকে রক্ষা করবে।

৫. CPR শিখে রাখুন, প্রয়োজনে জীবন বাঁচান
যেকোনো জরুরি মুহূর্তে CPR জানা থাকলে আপনি কারও প্রাণ বাঁচাতে পারেন। স্কুল, অফিস, বাসা—যেখানেই সুযোগ পান, CPR ও AED ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিন।

সুস্থ শরীর, বয়স কম, অ্যাথলেটিক চেহারা এসব এখন আর নিরাপত্তার চিহ্ন নয়। হার্ট এখন অনেক বেশি ঝুঁকির মুখে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন। লক্ষণগুলো খেয়াল করুন, নিয়মিত পরীক্ষা করান, নিজের জীবনযাপন পর্যালোচনা করুন। জীবন খুবই মূল্যবান, আপনার হার্টই এর মূল চালিকাশক্তি। সেটার যত্ন নেওয়া এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং একান্ত প্রয়োজন।

সূত্র:https://tinyurl.com/msx7ke7e

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *