হৃদরোগ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক সময় হার্টের সমস্যাগুলো নীরবে আসে, যা হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। হৃদপিণ্ডের এসব সূক্ষ্ম সতর্কবার্তা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয় অথবা অন্য সাধারণ রোগের লক্ষণ ভেবে ভুল করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি নিচের পাঁচটি লক্ষণকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়, তাহলে অনেক অকালমৃত্যু এড়ানো সম্ভব।
১. অস্বাভাবিক ক্লান্তি
যদি আপনি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন যা বিশ্রাম নেওয়ার পরেও দূর হয় না, তবে এটি হৃদরোগের একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় এটি হার্ট ফেইলিউরের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে, যেখানে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না। মহিলারা প্রায়শই এই ধরনের ক্লান্তি অনুভব করেন যা পুরুষদের তুলনায় বেশি উপেক্ষা করা হয়।
২. ঘুমের সমস্যা
ঘুমের সমস্যা, যেমন – অনিদ্রা, রাতে ঘন ঘন জেগে ওঠা, অথবা শ্বাসকষ্টের কারণে ঘুম ভেঙে যাওয়া – এগুলো হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। হার্ট ফেইলিউর বা করোনারি আর্টারি রোগের কারণে রাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। স্লিপ অ্যাপনিয়া, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, সেটিও এই ধরনের ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে।
৩. হজমের সমস্যা বা বমি বমি ভাব
অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হিসেবে বুকে ব্যথা না হয়ে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বদহজম বা বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায়। যেহেতু এই লক্ষণগুলো সাধারণ হজমের সমস্যার সাথে মিলে যায়, তাই প্রায়শই ভুল বোঝা হয় এবং গুরুতরভাবে নেওয়া হয় না। যদি এই লক্ষণগুলো হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এর সাথে ঘাম বা শ্বাসকষ্ট থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা বাহুতে ব্যথা
বুকে ব্যথার বদলে শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা অনুভব করা হার্ট অ্যাটাকের একটি সাধারণ কিন্তু প্রায়শই ভুল বোঝা লক্ষণ। ব্যথা ঘাড়, চোয়াল, পিঠের উপরের অংশ, বা বাম বাহুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় মনে হতে পারে পেশী টান, গ্যাস বা অন্য কোনো সাধারণ সমস্যা। কিন্তু যদি এই ব্যথা নতুন হয়, হঠাৎ করে আসে এবং বুকের অস্বস্তির সাথে জড়িত থাকে, তবে তা হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
৫. শ্বাসকষ্ট
ব্যায়াম না করা সত্ত্বেও বা সামান্য পরিশ্রমে যদি আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে তা হার্টের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। হৃদপিণ্ড যখন পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন ফুসফুসে তরল জমতে শুরু করে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। এই লক্ষণটি ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) বা হাঁপানির মতো অন্য রোগের সঙ্গে ভুল হতে পারে, তাই সতর্ক থাকা জরুরি।
যদি আপনি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, বিশেষ করে যদি একাধিক লক্ষণ একসাথে দেখা দেয় বা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা, ধূমপান বা পারিবারিক ইতিহাস), তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা হৃদরোগের গুরুতর পরিণতি থেকে রক্ষা করতে পারে। হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং সক্রিয় জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Leave a Reply