free tracking

গ্রামের প্রথম পাইলটের মৃত্যুতে গর্বের গল্প রূপ নিল শোকে!

এক সময় গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল গ্রামবাসীর, যখন গ্রামের এক সন্তান আকাশ ছুঁয়েছিল। আজ সেই গর্ব মিশে গেছে অশ্রুতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের সন্তান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির আহমেদ সাগরের মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ পুরো গ্রাম।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ঢাকায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন তৌকির আহমেদ সাগর। তার এই অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে। যদিও প্রায় ৩০ বছর ধরে গ্রামের সেই বাড়িতে কেউ স্থায়ীভাবে থাকেন না, তবুও ছুটিতে, ঈদে বা পারিবারিক কোনো আয়োজনে পরিবারের সদস্যরা ফিরে আসতেন সেই বাড়িতে। ঘন আমগাছে ঘেরা বাড়িটি আবারও মুখর হয়েছিল সেই স্মৃতিচারণায়, তবে এবার কান্নার শব্দে।

গ্রামের প্রথম পাইলট হিসেবে তৌকির ছিলেন গর্বের প্রতীক। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই সেই বাড়িতে ছুটে এসেছেন এলাকার মানুষ, স্বজনরা। অনেকেই ভেবেছিলেন মরদেহ গ্রামে আনা হবে, শেষবারের মতো তাকে দেখার আশায় ভিড় করেছিলেন তারা।

তৌকির আহমেদ সাগরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে হলেও তার পৈত্রিক নিবাস কৃষ্ণচন্দ্রপুর। বসবাস করতেন রাজশাহীতেই এবং কর্মস্থল ছিল ঢাকা। তবে নাড়ির টানে বারবার ফিরে আসতেন নিজ গ্রামে। তার শেষ দাফন হবে রাজশাহীতেই, পরিবার থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।

তার নানার ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই ঈদ কিংবা ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সাগর গ্রামে আসতো। পাইলট হওয়ার খবর শুনে গ্রামের মানুষরা গর্বে বুক ফুলিয়ে বলতো ‘ও আমাদের গ্রামের ছেলে’।

প্রতিবেশী ফাতেমা বেগম বলেন, ভাতিজার মৃত্যুর খবর প্রথমে মানুষের মুখে মুখে, পরে টিভিতে দেখলাম। ভেবেছিলাম গ্রামে নিয়ে আসবে, তাই এসেছি দেখতে। এসে জানলাম রাজশাহীতেই দাফন হবে। ছেলেটা খুবই ভালো ছিল, সবার সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করতো।

তৌকিরের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী সাবিনা খাতুন বলেন, বিয়ের পর নতুন বউকে নিয়ে এসেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্রপুরে। এমনকি গত ঈদের পরেও সবার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন। তার বাবা-চাচারা সাত ভাই, সবাই এখন রাজশাহী, ঢাকা ও বিদেশে থাকেন। তবে তাদের আত্মীয়স্বজন এখনও গ্রামেই আছেন।

স্থানীয় যুবক সাকিব আলী বলেন, সমাজের অসহায়, দরিদ্র মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল চোখে পড়ার মতো। তার মৃত্যুতে শুধু পরিবারের নয়, গোটা গ্রামের মানুষের মন ভেঙে গেছে। অনেকেই না জেনে মরদেহ আসবে ভেবে বারবার ফিরে যাচ্ছেন। গ্রামের মানুষ এমন একজন ছেলেকে হারিয়ে শোকগ্রস্ত।

জানা গেছে, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির আহমেদ সাগরের দাদা ও নানার বাড়ি একই এলাকায়। তার বাবা তহরুল ইসলাম একজন আমদানি-রপ্তানিকারক এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী। পাশাপাশি তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একজন সদস্য।

একটি গ্রাম, যে সন্তানকে নিয়ে গর্ব করেছিল, আজ তাকেই হারিয়ে শোকে স্তব্ধ। আকাশ জয় করা সেই পাইলট আজ নিজ গ্রামবাসীর হৃদয়ের আকাশে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *