শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় টি টোয়েন্টিতে বিধ্বস্ত করে এক ম্যাচ আগেই প্রথমবারের মত টি টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন বল হাতে জ্বলে ওঠেন বাংলাদেশের দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলাম। তাকে যোগ্য সহায়তা করেন শেখ মেহেদী।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে জাকের আলীর ৪৮ বলে ৫ ছক্কা ও ১ চারে ৫৫ এবং শেখ মেহেদীর ২৫ বলে ২ ছক্ক ও সমান চারে ৩৩ রানের ওপর ভর করে ২০ ওভারে ১৩৩ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে পাকিস্তানকে শুরু থেকে চেপে ধরে টাইগাররা। নিয়মিত বিরতিতে তারা উইকেট হারাতে থাকে। একপর্যায় তারা স্কোরবোর্ডে ৩০ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। শেষ পর্যন্ত সব উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। ফলে বাংলাদেশ ৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
বাংলাদেশের দেয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। শেখ মেহেদীর করা প্রথম ওভারের শেষ বলে রানআউট হন পাকিস্তানি ওপেনার সাইম আইয়ুব। পয়েন্টে বল ঠেলে এক রান নিতে গিয়ে দ্বিধায় পড়েন তিনি। রিশাদ হোসেনের থ্রোয়ে লিটন দাস স্টাম্প ভেঙে দেন। সাইম ফেরেন ৪ বলে ১ রান করে।
পরের ওভারে বাংলাদেশ পায় দ্বিতীয় উইকেট। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হন মোহাম্মদ হারিস। রিভিউ নিলেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচেই ব্যর্থ হলেন হারিস।
তৃতীয় ওভারে আরও একটি আঘাত হানে বাংলাদেশ। শরিফুলের বলে উইকেটকিপার লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ফখর জামান। ৮ বলে ৮ রান করেন তিনি। পাকিস্তানের স্কোর তখন মাত্র ১৪।
এরপর চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তানজিম হাসান সাকিব। পরপর দুই বলে হাসান নেওয়াজ ও মোহাম্মদ নেওয়াজকে আউট করেন তিনি। দু’জনকেই উইকেটকিপার লিটনের গ্লাভসে ক্যাচ বানান তানজিম। হাসান করেন ৬ বলে ০ রান, মোহাম্মদ নেওয়াজ ফেরেন গোল্ডেন ডাক নিয়ে। তখন দলীয় রান ১৫। এরপর অধিনায়ক সালমান আগাকে দলীয় ৩০ রানে তাওহিদ হৃদয়ের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান শেখ মেহেদি।
দলীয় ৪৭ রানের সময় সপ্তম উইকেট হারায় পাকিস্তান। এবার শেখ মেহেদির শিকার খুশদিল শাহ। আগের ওভারে জীবন পেয়েও বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না তিনি। পরের ওভারে মেহেদীর বলে এলবির শিকার হন। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি এ পাক ব্যাটার। অষ্টম উইকেটে ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদি মিলে করেন ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। তবে দলীয় ৮৮ রানে আব্বাস আফ্রিদিকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন শরিফুল। ম্যাচে এটি ছিল তার তৃতীয় উইকেট। পাকিস্তান হারায় তাদের ৮ম উইকেট।
নবম উইকেটে ফাহিম আশরাফ ও আহমেদ দানিয়েল ৩৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। জয় থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে ৫১ রান করে রিশাদের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ফাহিম আশরাফ। শেষ ওভারে মুস্তাফিজের প্রথম বলকে মাঠ ছাড়া করেন আহমেদ দানিয়েল। কিন্তু পরের বলেই বান্ডারি লাইনে ফিজের বলে শামিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দানিয়েল। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ৩টি, শেখ মেহেদী ও তানজিম সাকিব ২টি করে, মুস্তাফিজ ও রিশাদ একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। সিরিজ জয়ের ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৮ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান জাকের আলী এবং শেখ মেহেদী হাসান। জাকেরের দৃঢ় অর্ধশতকেই ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৩ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।
একাদশে পরিবর্তন এনে নিয়মিত ওপেনার তানজিদ তামিমের জায়গায় সুযোগ পান নাঈম শেখ। কিন্তু এই বাঁহাতি ওপেনার মাত্র ৭ বলে ৩ রান করে ফাহিম আশরাফের বলে উইকেটকিপারের হাতে ধরা পড়েন। তার পরপরই ফিরেন অধিনায়ক লিটন দাস। মাত্র ৯ বলে ৮ রান করে সালমান মির্জার শিকার হন তিনি।
ঝড় তোলার মতো অবস্থানে থেকেও ব্যর্থ হন পারভেজ হোসেন ইমন। আর তাওহীদ হৃদয় রান আউট হয়ে ফেরেন ১২ রানে। এক পর্যায়ে ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন জাকের আলী ও শেখ মেহেদী। দুজনের ৪৯ রানের জুটিই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড়।
শেষদিকে বলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রান তুলতে কিছুটা হিমশিম খেলেও জাকের তার ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করেন। ইনিংসের শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। পাকিস্তানের হয় সালমান মির্জা, আহমেদ দানিয়েল ও আব্বাস আফ্রিদি ২টি করে এবং ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ নেওয়াজ একটি করে উইকেট লাভ করেন।
Leave a Reply