অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের হেলিকপ্টার নিয়ে উদ্ধার করল র‌্যাব!

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে উত্তাল সারা দেশ। সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে।

এরমধ্যে মেরুল বাড্ডার কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে হেলিকপ্টার নিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে র‌্যাব।

প্রথমে কয়েকজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর আবারও হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে আটকে পড়া সবাইকে একে একে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে র‌্যাব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ ওই ভবনের নিচে ঢুকে পড়েন। পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সেই ভবনে ভাঙচুর করেন।

আন্দোলনকারীদের একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির খালিদ সময় সংবাদকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বাড্ডা-রামপুরা সড়কে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে টিয়ার শেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। কয়েকঘণ্টা ধরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এরপর শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে পুলিশ সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি ভেতরে অবস্থান নেয়। এরপর খবর পেয়ে র‌্যাব এসে হেলিকপ্টারে করে তাদের উদ্ধার করে। কুড়িল থেকে রামপুরা সড়ক এখন শিক্ষার্থীদের দখলে রয়েছে।

‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে বাড্ডা-রামপুরা ছাড়াও রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। সারা দেশ থেকেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। তখন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ।

কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত ৯ জুলাই আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।

দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য ১০ জুলাই আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

আন্দোলনকারীরা আদালতের আদেশ মানে না দাবি করে নির্বাহী বিভাগের আদেশের দিকে তাকিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ চালিয়ে আসছেন।

সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। সন্ধ্যার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। সেখানে অনেকে আহত হন।

তাদের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। শেষ খবর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে বুধবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে সাংবাদিকসহ আনেকে আহত হয়েছেন।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষণে তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে। এরপরও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *