দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর দক্ষ পাইলট হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—স্বপ্ন পূরণের সেই একক যাত্রাই হয়ে উঠলো তার জীবনের শেষ উড্ডয়ন।
সোমবার দুপুরে ঢাকার উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় স্কুলের বহু শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়। সেইসঙ্গে প্রাণ হারান যুদ্ধবিমানের একমাত্র পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরও, যাকে প্রথমে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, পরে চিকিৎসার অভাবে মারা যান।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা। স্কুলের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের অফিস রুম থেকে পরে জীবিত উদ্ধার করা হয় পাইলট তৌকিরকে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অফিস করতেন বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, যিনি বিবিসি বাংলার কাছে তুলে ধরেছেন সেই বিভীষিকাময় দিনের বিবরণ।
তিনি বলেন, “দুপুরে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনেই রুম থেকে বেরিয়ে আসি। দেখি, ছাদের একটা বড় অংশ ভেঙে পড়েছে আর চারদিকে আগুন। আগুন বাড়তেই থাকে। কিছু শিক্ষার্থী বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। আমরা গ্রিল ভেঙে ১২–১৩ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করি।”
প্রায় আধা ঘণ্টা পর নাসিরউদ্দিন নিজ অফিসে ফিরে গিয়ে দেখেন, তার ডেস্ক চুরমার হয়ে গেছে। হঠাৎ চোখে পড়ে একটি প্যারাসুট ঝুলে আছে। তখনই সন্দেহ জাগে—এখানে কেউ থাকতে পারে। পরে সার্চ করতে গিয়ে ঘরের এক কোণে পাওয়া যায় পাইলট তৌকিরকে, যিনি তখনও জীবিত ছিলেন।
ঘটনার পরপরই উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয় তৌকিরকে। কিন্তু চিকিৎসার জন্য সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া না যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। একটি সম্ভাবনাময় জীবন থেমে যায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই।
তৌকির ইসলাম সাগর ছিলেন নবীন ও প্রতিশ্রুতিশীল একজন পাইলট। তার প্রশিক্ষক এবং সহকর্মীদের মতে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও নিবেদিতপ্রাণ। তার এই অকাল মৃত্যুতে শুধু বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নয়, পুরো জাতিই হারালো এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে।
Leave a Reply