free tracking

লিটন নাকি সালমান, কথার লড়াই কে জিতল?

গত মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই লজ্জার হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল টাইগাররা। ঘরের মাঠে টানা দুই ম্যাচ জিতে আগে সিরিজ নিশ্চিত ছিল, তৃতীয় ম্যাচে জয় পেলেই ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানকে হোয়াইটয়াশ করত স্বাগতিকরা।

কিন্তু বাজে ব্যাটিংয়ে তৃতীয় ম্যাচে ৭৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এতে কোনো রকম সম্মানরক্ষা হয়েছে পাকিস্তানের। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ১৬.৪ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট হলে রাত ৯টার মধ্যেই শেষ হয় মাঠের লড়াই। কিন্তু কে জানতো কথার লড়াই যে এখনও বাকি।

প্রেসবক্স থেকে বেরিয়ে সকল সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলন কক্ষে অপেক্ষা করছে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের জন্য। তখনও চলছে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। হঠাৎ মিরপুরে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের অপেক্ষায় দীর্ঘ হলো। বৃষ্টিতে ভিজেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করল বিসিবি।

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজে উল্লাস করছে মিরাজ, শামীম, মাহেদীরা। এর মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনে হাজির পাক অধিনায়ক সালমান আঘা। প্রথম দুই ম্যাচে মিরপুরে রীতিমতো সংগ্রাম করার পর তৃতীয় ম্যাচে আলো ছড়িয়েছে পাক ব্যাটারা।

তাই স্বাভাবিকভাবেই উইকেট নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে। মিরপুর উইকেট নিয়ে সব সময়ই সমালোচনা হয়। তাই সুযোগ পেয়ে ছাড় দেননি সালমানও। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এমন কন্ডিশন আর কোথাও পাব। বাংলাদেশ ছাড়া আমি যেখানেই গেছি, এমন কন্ডিশন কোথাও দেখিনি। প্রস্তুতির ব্যাপারে…এমন কোনো কন্ডিশন ছিল না যেখানে এখানকার জন্য প্রস্তুতি নেয়া যেত।

‘তবে হ্যা, আমাদের সব কন্ডিশনে গিয়ে পারফর্ম করতে হবে। কথা হচ্ছে, আমরা এই সিরিজে সেভাবে পারফর্ম করতে পারিনি যেভাবে আমাদের করা উচিত ছিল। কন্ডিশন সম্পর্কে চিন্তা না করে আমাদের পারফরম্যান্স করতে হবে।’

এরপরই প্রশ্ন চলে আসে তাহলে কি তৃতীয় ম্যাচে পিচের মান ভালো ছিল। জবাবে পাক অধিনায়ক বলেন, এটা ভিন্ন কোনো পিচ ছিল না। আমরা শুধু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি দারুণভাবে। আমরা একদম শুরুতেই বোলারদের চাপে ফেলে দিয়েছি। আমরা জুটি গড়েছি, যেটা প্রথম দুই খেলায় একদমই ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একই ধরনের উইকেট।

এরপরই পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সালমানকে। আগের দুই ম্যাচে হারের পেছনে পিচকে দোষ দিবেন নাকি ব্যাটারদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারার ব্যর্থতাকে দায়ী করবেন।

অনেকটা বিব্রত হয়ে সালমান বলেন, আমি পিচ সম্পর্কে কিছুই বলিনি। আমি বলেছি এটা আমাদের এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আদর্শ পিচ না। আমার মনে করি না এই ধরণের পিচ সেখানে পাব। কিন্তু আমার পিচ নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। আমরা আন্তর্জাতিক দল এবং খেলোয়াড়, আমরা যেখানেই যাব, যে উইকেটেই খেলব, মানিয়ে নিতে হবে এবং ভালো খেলতে হবে।

‘আমরা প্রথম দুই ম্যাচে ভালো করতে পারিনি, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তারা আমাকে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, সেটা নিয়ে আমি বলেছি যে এই প্রস্তুতি আমরা চাইনি। এটা এমন পিচ নয় যেটা আমরা সামনে পাব।’

মিরপুরের পিচ নিয়ে যখন কঠোর সমালোচনায় পাকিস্তান অধিনায়ক। তখন মিরপুরের পিচকে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ বলে পাল্টা জবাব দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন। সালমান সংবাদ সম্মেলন শেষ করে যাওয়ার সময় নিজ দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে ছবি তুলছিলেন।

এর মাঝেই উপস্থিত লিটন কুমার দাস। লিটনকে দেখে হাত মেলান পাকিস্তান টিমে মিডিয়া ম্যানেজার ও অধিনায়ক সালমান। এরপরই শুরু হয় লিটনের কথার ছক্কা।

মিরপুরের উইকেট নিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ভালো উইকেট ছিল। আগের দুই ম্যাচ যে খেললাম ওটার চেয়ে অনেক ভালো উইকেট ছিল। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ছিল। আমাদের বোলিং ইউনিট খুবই ভালো করেছে। অধিনায়ক হিসেবে মনে করি, ১৮০ চেইজ করার মত ছিল। ব্যাটিং ইউনিট ক্যাল্কুলেটিভ খেলাটা খেলতে পারেনি।

এই উইকেট এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আইডল নয় বলে জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের কোচ ও অধিনায়ক। কিন্তু লিটনের ভাষ্য, অবশ্যই এভাবে এমন উইকেটে খেলে গেলে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে সাহায্য করবে। অবশ্যই সাহায্য করবে। ব্যাটিং বোলিং দুই জায়গাতেই সাহায্য করবে বলে মনে হয়

নিজের কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিটন স্মরণ করিয়েছিলেন সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সেন্ট ভিনসেন্টে বিশ্বকাপ খেললাম একই ধরনের উইকেট। সিরিজ না বিশ্বকাপে। ১৩০, ১৪০ রানও বেশি ছিল। ক্রিকেটে এমন থাকবে কিছু কিছু দিন। প্লেয়ার হিসেবে আমাদের মানিয়ে নিয়ে খেলাটাই কাজ। প্রথম দুই ম্যাচে আমরা পেরেছি, তারা পারেনি। আজকে আমরা পারিনি তারা ভালো খেলেছে।

আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া কাপ এবং পরের বছরের ভারত ও শ্রীলঙ্কায় হওয়ার কথা রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই দুই টুর্নামেন্টে বোঝা যাবে লিটন ও সালমান দুজনের মধ্যে কে সঠিক বলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *