ছোট বোন রাইসার জন্য আইসক্রিম আনতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সিনথিয়া (১৩)। সে মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত রাইসা মনির বড় বোন। একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে রাইসা মনির বাবা শাহাবুল শেখ গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দুটি বাচ্চা ওই স্কুলে পড়ে। একটা শেষ, আরেকটা বোনের জন্য ক্যান্টিনে আইসক্রিম আনতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। কিন্তু কীভাবে বাচ্চাকে স্কুলে দেবো। সেতো স্কুলে যেতে চায় না। আবার নাকি বিমান ব্লাস্ট হবে। সেদিন তাদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পর মেয়েরা বলছিল আব্বু আমাদের নিতে এসো। আমি তো গিয়ে আর পাইনি। আমার ছোট্ট মেয়েকে আমি আনতে পারিনি।’
এদিকে সকালে নিহত রাইসা মনির (১১) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
তিন ভাই বোনের মধ্যে মেজো রাইসা। বড় বোন সিনথিয়া (১৩)। সে একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট ভাই রাফসান (৪)।
তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামে।
পরিবার নিয়ে রাইসার বাবা শাহাবুল শেখ ঢাকার উত্তরা নয়ানগরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি একটি গার্মেন্টস এক্সোসরিস প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শোকে স্তব্ধ মা-বাবা। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলও যেন ফুরিয়ে গেছে। কথা পর্যন্ত বলতে পারছেন না। বড় বোন সিনথিয়া শোকে পাথর হয়ে গেছে। কারো সঙ্গে কথা বলছে না সে। ছোট ভাই রাফসানও ঘুরে ফিরে বোনকে খুঁজছে। কিন্তু কারো কাছে কোনো উত্তর নেই।
রাইসার মা মিম সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকাল সাড়ে ৬টায় টিফিন রেডি করে মেয়েদের ঘুম থেকে ডেকে তুলি। ওইদিন মুরগির মাংস আর রুই মাছ রান্না করি। রাইসার রুই মাছ ছিল খুব প্রিয়। নিজ হাতে তাকে খাইয়ে দেই। কিন্তু কে জানতো এটাই আমার হাতে তার শেষ খাওয়া। আমি প্রতিদিন দুই বোনকে স্কুলে দিয়ে আসি আর ওর আব্বু ছুটি শেষে নিয়ে আসে। সেদিন তার আব্বু দুই বোনকে স্কুলে নিয়ে যান।’
রাইসার নানি মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘রাইসা বলতো নানু আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো। আমি আব্বু-আম্মুকে সেবা যত্ন করবো। দেশের মেয়েদের সেবাযত্ন করবো। কোনো টাকা-পয়সা নেবো না। শুধু আমার জন্য দোয়া কইরো।’
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, ‘এ শোক সইবার মতো না। আল্লাহ পাক যেন তার বাবা-মাকে মেয়ের শোকে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন রাইসা মনির পরিবারের পাশে থাকবো।’
Leave a Reply