ক্যানসার ভীষণই জটিল অসুখ। এই রোগটাকে দ্রুত ধরে ফেলতে হবে। তবে ক্যানসারের কিছু কিছু লক্ষণ মানুষ গুলিয়ে ফেলেন। সেই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা হলো।
ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়লে অনেকটাই বাড়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা
ক্যানসার এমন একটি রোগ যা শরীরের কোষকে অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত করে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে শরীরের নানা অংশে। এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অনেক সময়ই সফলভাবে চিকিৎসা সম্ভব হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ক্যানসারের অনেক লক্ষণই সাধারণ অসুখ বা দৈনন্দিন চাপের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন অনেকে। এতে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয় এবং তা প্রাণঘাতী পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে।
এই লক্ষণগুলোকে সহজে গুরুত্ব না দিলে ভুল হবে
১. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
অনেকেই ভাবেন বেশি কাজ বা ঘুম না হওয়ার কারণে ক্লান্তি হচ্ছে। কিন্তু যদি বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্তি না কাটে, তবে তা হতে পারে রক্ত ক্যানসার বা কোলন ক্যানসারের ইঙ্গিত।
২. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
মাথা, পিঠ বা হাড়ে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা থাকলে অনেক সময় মানুষ সেটিকে বাত, স্নায়ুব্যথা বা অন্য কোনো সাধারণ সমস্যার ফল মনে করেন। কিন্তু এটি হাড়ের ক্যানসার, ব্রেন টিউমার বা মেটাস্টেসিসের লক্ষণও হতে পারে।
৩. ওজন কমে যাওয়া
ডায়েট না করেও হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া ক্যানসারের একটি বড় সতর্ক সংকেত। অনেকেই মনে করেন এটা স্ট্রেস বা হজমের সমস্যা, কিন্তু এটি পাকস্থলীর ক্যানসার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার বা ফুসফুসের ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে।
৪. চামড়ায় পরিবর্তন
মাথায় বা শরীরে হঠাৎ করে তিলের রঙ বা আকার বদলে যাওয়া, ক্ষত সারতে সময় নেওয়া—এই পরিবর্তনগুলো ত্বকের ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ এটি সাধারণ ইনফেকশন বা অ্যালার্জি ভেবে এড়িয়ে যান।
৫. গলায় ব্যথা বা আওয়াজে পরিবর্তন
একটানা গলায় ব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়া বা স্বরে পরিবর্তন দীর্ঘদিন থাকলে তা হতে পারে গলার ক্যানসারের লক্ষণ।
৬. বুকের মধ্যে জ্বালা বা হজমের সমস্যা
অনেকেই মনে করেন বুক জ্বালা মানেই গ্যাস বা অ্যাসিডিটি। কিন্তু এটি খাদ্যনালী বা পাকস্থলীর ক্যানসারেরও প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
৭. দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা রক্ত ওঠা
সাধারণ ঠান্ডা বা সর্দি ভেবে অনেকেই কাশি এড়িয়ে যান। কিন্তু কাশি দীর্ঘদিন ধরে থাকলে বা কাশির সঙ্গে রক্ত এলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম সতর্ক সংকেত।
সতর্কতা ও চিকিৎসা সবচেয়ে বড় অস্ত্র
ক্যানসারের বিরুদ্ধে জয় পেতে হলে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই একমাত্র পথ।
ক্যানসারের লক্ষণগুলোকে যদি আমরা “সাধারণ” বলে ভুল করি, তাহলে আমরা সময় হারিয়ে ফেলি—যা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্যবান জিনিস। তাই নিজে সচেতন হোন, এবং আপনার প্রিয়জনকেও সতর্ক করুন।
Leave a Reply