রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একের পর এক দুঃসংবাদ পাচ্ছেন দগ্ধদের স্বজনরা।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাড়ে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেছে চিকিৎসাধীন আরও দুই শিশুশিক্ষার্থী। তারা হলো মুসাব্বির মাকিন (১৩) ও তাসনিম আফরোজ আয়মান (১০)। এদিন সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে আয়মানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা, তার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৫ মিনিটে মাকিনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আগেরদিন বৃহস্পতিবারও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির দগ্ধ আরও দুই শিশুশিক্ষার্থী পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অসীমের পথে যাত্রা করে। দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এ দুর্ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারের হিসাব অনুযায়ী মারা গেছে ৩৩ জন, আর এখনো চিকিৎসাধীন ৫০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মাইলস্টোনের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে আহত ৪০ জন, মারা গেছে ১৫; সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (ঢাকা) ভর্তি আট, মৃত্যু ১৫; শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি একজন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরার লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার ও ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন করে মারা গেছে। এ ছাড়া জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি আছে একজন।
এ বিষয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে গতকাল বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আজ আমরা ক্রিটিক্যাল অবস্থায় থাকা দুই শিশুকে হারিয়েছি। সকালে আয়মান এবং দুপুরে মাকিন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আয়মানের বাড়ি শরীয়তপুরে, মাকিনের বাড়ি গাজীপুরে। তাদের মরদেহ যথাযথভাবে দাফনের জন্য সংশ্লিষ্ট দুই জেলার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুলভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ার ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরতে এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। অধ্যাপক নাসির উদ্দীন জানান, বর্তমানে ইনস্টিটিউটে ৪০ রোগী ভর্তি আছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক (ক্রিটিক্যাল), ১০ জন সিভিয়ার কেস এবং ২৫ জন ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের রোগী।
তিনি বলেন, ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের ১০ জনকে পোস্ট-অপারেটিভ ডকে রাখা হয়েছে, বাকিদের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে আজ শনিবার চার থেকে পাঁচজন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আশা করছি প্রতিদিনই আমরা কিছুসংখ্যক রোগীকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি পাঠাতে পারব। এর মধ্যে আরেকটা ভালো খবর হচ্ছে, ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের মধ্যে দুজন বর্তমানে সজাগ আছে এবং নিজেরাই নিঃশ্বাস নিতে পারছে।’
গত ২১ জুলাই দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে আছড়ে পড়ে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান। এর আগে দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সে চেষ্টা সফল হয়নি, বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে হতাহতদের দ্রুত কাছের কয়েকটি হাসপাতালে নেন। গতকাল পর্যন্ত এ দুর্ঘটনায় বিমানটির পাইলটসহ ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছিলেন দেড় শতাধিক শিশুশিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। হতাহতের অধিকাংশই শিশুশিক্ষার্থী। এখনো রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫০ জন।
আহতদের চিকিৎসায় চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুরের মেডিকেল দল বাংলাদেশে এসেছে। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে আহদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তারা।
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের এ ঘটনায় ওইদিনই উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। যে কমিটি দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে প্রতিবেদন তৈরি কবে। এদিকে সরকার জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা উন্নত করতে এবং বিমান-সম্পর্কিত দুর্যোগ শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার।
Leave a Reply