রাষ্ট্র পরিচালনায় ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’—এই ছয়টি মূল্যবোধকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে বামপন্থি চারটি দল আপত্তি তুলেছে। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি ও এলডিপিসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দল এই প্রস্তাবে একমত।
রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংলাপে বাম দলগুলো তাদের আপত্তির কথা স্পষ্টভাবে জানায়। এদিন ছিল কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিন।
বাম চার দলের (সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাসদ) মতে, সংবিধানের মূলনীতি আদর্শিক বিষয়, এটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা আপসের মাধ্যমে নির্ধারণ করা ঠিক নয়।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন,“মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানে যেসব চারটি মূলনীতি (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা) ছিল, তা পরিবর্তন করার ইঙ্গিত থাকলে আমরা আলোচনায় থাকতে পারি না।”
তিনি বিকল্পভাবে প্রস্তাব দেন “৭২’র সংবিধানের মূল চারনীতির সঙ্গে নতুন মূলনীতি সংযোজন করা যেতে পারে, কিন্তু বাদ দেওয়া যাবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন,“কমিশনের প্রস্তাবই আমাদের প্রস্তাব। কোনো আপত্তি নেই।”
জামায়াত ইসলামীর প্রতিনিধিদের বক্তব্য না জানানো হলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তারাও এই নতুন প্রস্তাবে আপত্তি তোলেননি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন,“আমরা অতীতের বিতর্কে যেতে চাই না। কমিশনের প্রস্তাবেই আমরা একমত। আগে যা ছিল, তা পুরোপুরি বাতিল হওয়া উচিত।”
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন,“সমাজতন্ত্র এখন আন্তর্জাতিকভাবে পরিত্যক্ত। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকায় ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ যুক্ত করার দাবি থেকেও আমরা সরে এসেছি।”
নেতা আবুল হাসান রুবেল বলেন,“৭২-এর বিতর্কিত ধ্যানধারণা বাদ দিয়ে কমিশন এক অন্তর্ভুক্তিমূলক, মানবিক এবং ন্যায়ভিত্তিক মূলনীতি প্রস্তাব করেছে। আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই।”
এই প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নিয়ে সংলাপে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলেও অধিকাংশ দলের সমর্থনের কারণে কমিশনের কাজ গতি পাচ্ছে। তবে বাম দলগুলোর আপত্তি আগামী দিনে সংলাপ জটিল করে তুলতে পারে।
Leave a Reply