free tracking

কিডনি নষ্ট হচ্ছে নিঃশব্দে: শুরুতে যে ৫টি লক্ষণ অনেকেই বোঝেন না!

মানসিক চাপ শুধু মন বা আবেগের ওপর নয়, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত স্ট্রেস রক্তচাপ ও রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় চাপ তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং শ্বাস-নিয়ন্ত্রণ চর্চার মতো সচেতন মনের চর্চা শরীর ও মনকে প্রশান্ত করে, যা স্ট্রেস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। গবেষণায়ও দেখা গেছে, ‘মাইন্ডফুলনেস’ ট্রেনিং সিমপ্যাথেটিক নার্ভ অ্যাকটিভিটি কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীদের জীবনমান উন্নত করে।

মানবদেহে কিডনির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেহের বর্জ্য অপসারণ, তরল ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কিডনি বিকল হওয়ার প্রাথমিক সংকেতগুলো অনেক সময় উপেক্ষিত থেকে যায় কিংবা ভুলভাবে অন্য সাধারণ সমস্যা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন কোনও উপসর্গ ছাড়াই কিডনির ক্ষতি চলতে পারে। অথচ প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা গেলে এই নীরব ঘাতককে থামানো সম্ভব।

১. সবসময় ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা

কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত হলে দেহে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়, যা শক্তির স্তরে প্রভাব ফেলে। কিডনি যখন যথেষ্ট ‘এরিথ্রোপয়েটিন’ (রক্তকণিকা তৈরির জন্য দায়ী হরমোন) উৎপাদন করতে পারে না, তখন রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, এমনকি হালকা কাজেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ একে বয়সজনিত ক্লান্তি বা সাধারণ দুর্বলতা ভেবে এড়িয়ে যান, ফলে রোগ শনাক্তে বিলম্ব হয়।

২. প্রস্রাবের স্বভাবে পরিবর্তন

প্রস্রাবের রং, গন্ধ বা ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন কিডনি সমস্যার প্রথম দিকের সতর্কবার্তা হতে পারে, কিন্তু সচরাচর গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বিশেষ করে রাতের বেলা ঘন ঘন প্রস্রাব (নকচুরিয়া), ফেনা বা বুদবুদযুক্ত প্রস্রাব (যা প্রোটিন নিঃসরণের ইঙ্গিত দেয়), প্রস্রাবে রক্ত বা খুব গাঢ় রং এগুলো সবই কিডনি সমস্যার সম্ভাব্য লক্ষণ। ছোট বা সামান্য মনে হলেও এই পরিবর্তনগুলো উপেক্ষা করলে রোগ নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ে।

৩. পা, গোড়ালি বা চোখের নিচে ফোলা ভাব

যখন কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও তরল দূর করতে ব্যর্থ হয়, তখন শরীরে পানি জমে গিয়ে ফোলাভাব দেখা দেয় বিশেষ করে পায়ের পাতা, গোড়ালি এবং চোখের নিচে। অনেকে একে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফল মনে করেন বা খাবারের দোষ দেন, অথচ এটি হতে পারে কিডনির ব্যর্থতার লক্ষণ। যত দ্রুত পরীক্ষা করা হয়, ততই ভালো।

৪. চুলকানি বা ত্বকের পরিবর্তন

চিরস্থায়ী চুলকানি বা ত্বকের শুষ্কভাব কিডনির অজানা সংকেত হতে পারে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে বর্জ্য জমে যায়, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলস্বরূপ ত্বকে খুশকি, শুষ্কভাব এবং অকারণে চুলকানি দেখা দেয়। ত্বকে সমস্যা না থাকলেও যদি চুলকানি না কমে, তাহলে কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।

৫. ক্ষুধামান্দ্য, মুখে ধাতব স্বাদ বা বমি ভাব

কিডনি যদি সঠিকভাবে ফিল্টার করতে না পারে, তাহলে শরীরে ‘ইউরেমিক টক্সিন’ জমে গিয়ে মুখে ধাতব স্বাদ, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ (যাকে ‘ইউরেমিক ফেটর’ বলা হয়), খাবারে অরুচি ও বমি ভাবের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এগুলো অনেকেই হজমের সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যান, ফলে চিকিৎসা পেতে দেরি হয়।

কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো এটি নিঃশব্দে শরীরকে গ্রাস করে। তাই ছোট ছোট উপসর্গকেও হালকাভাবে না নিয়ে সতর্ক থাকাই সর্বোত্তম। এই প্রাথমিক সংকেতগুলো চিহ্নিত করে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে কিডনির ক্ষতি অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের প্রতি সচেতন হোন, নিজেকে সুস্থ রাখুন।

সূত্র:https://tinyurl.com/4pjmaw4d

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *