আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস নীরবে হৃদপিণ্ডের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। ব্রিটেনের নাফিল্ড হেলথের কার্ডিওলজিস্ট ডা. ক্রিস্টোফার ব্রয়েড এমন পাঁচটি দৈনন্দিন অভ্যাস চিহ্নিত করেছেন, যা হৃদরোগের ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। এই অভ্যাসগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে পরিবর্তন আনলে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
১. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা (Sedentary Lifestyle)
দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকা বা শারীরিক পরিশ্রমের অভাব হৃদরোগের একটি বড় কারণ।
ঝুঁকি: শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সমাধান: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো বা স্ট্রেচিং করার অভ্যাস করুন। লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা বা কাজের ফাঁকে ছোট বিরতি নিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে আসাটাও উপকারী।
২. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ (Chronic Stress)
আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী চাপ হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ঝুঁকি: মানসিক চাপ থেকে নিঃসৃত স্ট্রেস হরমোন (যেমন কর্টিসল) রক্তচাপ বাড়ায় এবং ধমনীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন ধূমপান বা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতাকেও বাড়িয়ে তোলে।
সমাধান: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো অভ্যাসগুলো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কাজের ফাঁকে ছোট ব্রেক নেওয়া বা পছন্দের কোনো কাজ করাও উপকারী।
৩. অপর্যাপ্ত ঘুম (Poor Sleep)
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব কেবল ক্লান্তিই নয়, হৃদরোগেরও কারণ হতে পারে।
ঝুঁকি: ঘুমের অভাব উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা বাড়ায়, যা হৃদরোগের প্রধান কারণ। এছাড়াও, স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া) হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
সমাধান: প্রতিদিন রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং রাত ১০-১১টার মধ্যে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। শোবার অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
৪. সূর্যালোকের অভাব (Lack of Sunlight)
সূর্যের আলো আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে ভিটামিন ডি উৎপাদনের জন্য।
ঝুঁকি: সূর্যালোকের অভাবে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রদাহ বাড়াতে পারে।
সমাধান: প্রতিদিন সকালে ১৫-৩০ মিনিট রোদে হাঁটুন বা খোলা আকাশের নিচে সময় কাটান। এছাড়াও, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, ফ্যাটি ফিশ (স্যামন, সার্ডিন) ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
৫. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (Social Isolation)
একাকিত্ব এবং সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদস্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ঝুঁকি: একাকিত্ব স্ট্রেস এবং উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে পারে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দেয়।
সমাধান: বন্ধু বা পরিবারের সাথে নিয়মিত সময় কাটান। সামাজিক ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী কাজ বা গ্রুপ অ্যাক্টিভিটিতে যোগ দিন, যা আপনাকে অন্যের সাথে যুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
কার্ডিওলজিস্টের মূল বার্তা:
ডা. ক্রিস্টোফার ব্রয়েড জোর দিয়ে বলেছেন: “ছোট অভ্যাস পরিবর্তনই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। নিয়মিত হাঁটা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও পর্যাপ্ত ঘুমই পারে হৃদয়কে সুস্থ রাখতে।”
সূত্র: Nuffield Health Brighton Hospital, UK
Leave a Reply