কিডনি স্টোন বা বৃক্কে পাথর—যেখানে আগে এই সমস্যা মধ্যবয়সী মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যেত, বর্তমানে তা তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও ভয়াবহ হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপর্যাপ্ত পানি পান, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ এবং পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার প্রবণতাই এ সমস্যার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে।
১. পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) ও তার প্রভাব
২. অনিয়ন্ত্রিত খাবার ও খাদ্যাভ্যাস
ফাস্টফুড, অতিরিক্ত লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও মিষ্টি পানীয় তরুণদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিতভাবে যুক্ত রয়েছে। এগুলো প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আবার বেশি পরিমাণে লাল মাংস বা প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে ইউরিনে সাইট্রেট কমে যায়, যা স্বাভাবিকভাবে পাথর প্রতিরোধ করে। এসব খাদ্যাভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
৩. সাপ্লিমেন্টের অপব্যবহার
অনেক তরুণ জিম সাপ্লিমেন্ট—যেমন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি বা প্রোটিন পাউডার—ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই গ্রহণ করেন। অতিরিক্ত এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে প্রস্রাবের রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা পাথর তৈরির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। আর পানি কম খেলে এর ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ে।
৪. প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে রাখুন
কোমরের একপাশে হালকা ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব বা ঘনঘন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন—এগুলোকে অনেক সময় তরুণরা ব্যায়ামের ফলে মাসল পুল বা কাজের চাপ বলে ভুল করেন। এতে চিকিৎসা দেরি হয় এবং সমস্যা জটিল আকার নেয়।
৫. প্রচলিত ভুল ধারণা ভাঙুন
অনেকেই মনে করেন, দুধ খেলে কিডনিতে পাথর হয়। অথচ বাস্তবতা হলো—দুধ বা প্রাকৃতিক উৎসের ক্যালসিয়াম শরীরে অক্সালেটের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়। আরেকটি ভুল ধারণা হলো, কিডনি স্টোন কেবল বয়স্ক বা পারিবারিক ইতিহাস আছে এমনদেরই হয়—যা বর্তমানে আর সত্য নয়। তরুণদের ব্যস্ত জীবন, পানির ঘাটতি এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এখন সবাইকেই ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
শেষ কথা
তরুণ বয়সেই কিডনি স্টোনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা রোধ করতে হলে সবার আগে পানির পরিমাণ বাড়াতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—এর প্রতি অবহেলা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে।
Leave a Reply