বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন আসে। তার মধ্যে অন্যতম একটি নীরব কিন্তু মারাত্মক সমস্যা হলো হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিস। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। কারণ, নারীদের বয়স ৪০ পেরোনোর পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে এবং মেনোপজের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ হঠাৎ কমে যাওয়ায় হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে হাড় সহজে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
নারীদের হাড়ক্ষয়ের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। মেনোপজের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি হলে হাড় ক্ষয় দ্রুত বাড়ে। আবার যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করেন না, তাদের ঝুঁকি বেশি। শরীরের ওজন অত্যধিক কম হলে, ধূমপান বা মদ্যপান করলে এবং দীর্ঘদিন শুয়ে থাকতে হয় এমন অসুস্থতা থাকলেও হাড় দুর্বল হয়। এছাড়া থাইরয়েড বা প্যারাথাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, খাবার হজমে সমস্যা বা দীর্ঘদিন ওষুধ সেবনের কারণেও হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
হাড়ক্ষয়ের প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো লক্ষণ না থাকলেও পরে শরীরে ব্যথা, ভারসাম্যহীনতা, হাঁটাচলায় কষ্ট এবং হঠাৎ পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেক নারীর ক্ষেত্রে হিপ ফ্র্যাকচার ঘটে থাকে। আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়াও এক ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
চিকিৎসকরা সাধারণত রোগীর বয়স, লক্ষণ, পূর্ববর্তী রোগ এবং এক্স-রে ও বিএমডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) পরীক্ষার মাধ্যমে হাড়ক্ষয় নির্ণয় করেন। প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস, যেমন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (দুধ, দই, কড লিভার অয়েল ইত্যাদি)। নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা এবং ৫০ বছর বয়সের পর নিয়মিত হাড়ের পরীক্ষা করা উচিত।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাড় শক্তিশালী করার জন্য নানা ধরনের ওষুধ যেমন এলেন্ডানেট সোডিয়াম, রিমোড্রোনেট সোডিয়াম, ইবানড্রেনিক অ্যাসিড ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। হরমোন ঘাটতি থাকলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিও দেওয়া হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রাথমিক অবস্থায় হাড়ক্ষয় নির্ণয় করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ, হাড় ভেঙে যাওয়ার পর তা শুধরে নিতে দীর্ঘ সময় ও কষ্ট হয়। তাই আগেভাগেই সচেতন হোন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিজের হাড়কে রাখুন সুস্থ ও শক্তিশালী।
Leave a Reply