কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া বা বিশ্রামের পরেও থেকে যাওয়া দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি হতে পারে ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। ক্যানসার যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, চিকিৎসার সাফল্যের সম্ভাবনাও তত বেশি হয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রোগ শুরুর আগেই তা চিহ্নিত করতে।
ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালের জুবিলি হিলস শাখার কনসালটেন্ট সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. অজেশ রাজ সাক্সেনা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ক্যানসার নিরাময়ের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হলো দ্রুত ও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ৩০–৫০ শতাংশ ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য, এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণে অনেক ক্ষেত্রেই জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।
ক্যানসারের ৮টি প্রাথমিক সতর্ক লক্ষণ: ডা. সাক্সেনা এবং স্টেরিস হেলথকেয়ারের সিইও জীবন কাসারার মতে, এই লক্ষণগুলো হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি:
১. কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া: ৬–১২ মাসে শরীরের ওজনের ৫ শতাংশ বা তার বেশি হঠাৎ কমে গেলে তা অন্ত্র, অগ্ন্যাশয় বা ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
২. দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি: সাধারণ ক্লান্তির মতো নয় বিশ্রামেও দূর না হওয়া অতিরিক্ত ক্লান্তি লিউকেমিয়া, কোলন বা পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
৩. অস্বাভাবিক ফোলা বা গাঁট: ঘাড়, স্তন, অণ্ডকোষ বা পেটের কোনো অংশে দীর্ঘস্থায়ী বা বাড়তে থাকা গাঁট থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
৪. মলমূত্রের অভ্যাসে পরিবর্তন: দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলে রক্ত থাকা কোলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। প্রস্রাবে রক্ত (হেমেচুরিয়া) দেখা দিলে তা কিডনি বা ব্লাডার ক্যানসারের সম্ভাবনা জাগায়।
৫. অস্বাভাবিক রক্তপাত বা নির্গমণ: পিরিয়ড ছাড়াও রক্তপাত, কাশিতে রক্ত বা স্তনবৃন্ত থেকে নির্গত তরল সবই ক্যানসারের সূচক হতে পারে।
৬. তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী কাশি বা কণ্ঠ ভাঙা: বিশেষত ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এটি ল্যারিঞ্জিয়াল বা ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে।
৭. ত্বকে বা তিলের অস্বাভাবিক পরিবর্তন: যদি দেখেন ত্বক বা ত্বকে থাকা তিলে কিছু অস্বাভাবিক পরি বর্তন দেখা দিচ্ছে তাহলে সাবধান থাকতে হবে। যেমন,
অসমতা, ধারার অস্পষ্টতা, রঙের ভিন্নতা এবং ৬ মিমি’র বেশি ব্যাস বেড়ে যাওয়া।
৮. দীর্ঘস্থায়ী ঘা যা ভালো হচ্ছে না: মুখ, ত্বক বা যৌনাঙ্গে ঘা যা দীর্ঘদিনেও শুকাচ্ছে না, তা ত্বক বা মুখের ক্যানসার হতে পারে।
ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগের ক্ষেত্রে সময়মতো সঠিক সচেতনতা ও আগেভাগে শনাক্ত করাই পারে জীবন বাঁচাতে। অনেক সময় ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো খুব সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার মতো মনে হলেও, তা অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি কোনো উপসর্গ ২–৩ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন অনেক আগেই বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতনতা এবং ঝুঁকিভিত্তিক স্ক্রিনিং এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিলে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই অনেক সহজ ও কার্যকর হতে পারে।
সবশেষে, যদি আপনি ৪০ বছরের বেশি বয়সী হন অথবা পরিবারের কারো ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্দিষ্ট স্ক্রিনিং করানোই হবে আপনার সুস্থতার পথে এক বড় পদক্ষেপ। কারণ, সময় থাকতেই ধরা পড়া ক্যানসার মানেই—জীবনের একটা নতুন সুযোগ।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a Reply