free tracking

ঘন ঘন হাই তুলছেন, হতে পারে যেসব মারাত্মক রোগের প্রথম সংকেত!

বিকেল হলেই তন্দ্রায় পড়েন এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম না। বিশেষ করে কোনও কাজের মাঝে অনেকেই তন্দ্রায় ঢলে পড়েন।আবার দেখা যায় কেও ঘুম কাটাতে বিকেল থেকেই একেপ পর এক কফি পান করছেন। এসব উপসর্গকে অনেকেই সাধারণ ক্লান্তি ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো হতে পারে মারাত্মক ঘুমের ঘাটতির লক্ষণ, যা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু তাই নয়, বড় ধরণেই ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ।

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত ঘুমাভাব বা ‘ডে টাইম স্লিপিনেস’ শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামাজিকভাবেও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘুমের ঘাটতি শুধু কাজে গাফিলতি নয়, দুর্ঘটনারও অন্যতম কারণ, বলেন  আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসনের প্রেসিডেন্ট ড. এরিক ওলসন। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত কম ঘুমানো দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, বিষণ্নতা, স্থূলতা ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

ঘুম পাচ্ছে মানেই কি ভালো ঘুম হয়নি: বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো বিরক্তিকর বোরিং মিটিংয়ে একটু চোখ লেগে যাওয়া যতটা স্বাভাবিক মনে করা হয় আসলে তেমন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের  ঘুম ও স্নায়ুবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ড. ক্রিস্টেন নিউটসন বলেন, যিনি সত্যিকারের বিশ্রাম পান, তিনি কোনোভাবেই জেগে থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়বেন না। যদি মিটিং  বিরক্তিকরও হয় তবুও ঘুম আসবে না। তিনি বলেন, ঘন ঘন হাই তোলা বা অলস সময়ে চোখ বন্ধ হয়ে আসা ঘুমের সমস্যারই বহিঃপ্রকাশ, যা অগভীর বা ভাঙা ঘুমের ইঙ্গিত দেয়।

মাইক্রো স্লিপ: ঘুম না হওয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হচ্ছে, আমাদের মস্তিষ্ক নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ঘুমে ঘাটতির ফলে মানুষ তার নিজের মানসিক অবস্থাকে ভুলভাবে বুঝতে শুরু করে। পেন মেডিসিনের ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. ইন্দিরা গুরুভগবতুলা বলেন মানুষ ভাবে সে ঠিক আছে, কিন্তু পরীক্ষা করলে দেখা যায়—সে ভুল করছে, মনোযোগ কম, সাড়া দিতে দেরি হচ্ছে।

এই সময় মস্তিষ্ক ‘মাইক্রো স্লিপ’-এ চলে যায়—দুই থেকে দশ সেকেন্ডের জন্য আপনার মাথা ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু আপনি বুঝতেই পারেন না! আর আপনি যদি তখন গাড়ি চালান, বিপদটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে ঘুমের ঘাটতি দায়ী, বলছে পরিসংখ্যান।

ঘুম কম হওয়ার কারণ: বিভিন্ন কারণেই ঘুম কম হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। শুধু রাতে দেরি করে ঘুমানোই নয়, কিছু ঘুম সংক্রান্ত রোগ যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া, ইনসমনিয়া, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম ইত্যাদি থেকেও অতিরিক্ত তন্দ্রাভাব হতে পারে। এছাড়া কিছু ওষুধ, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা স্ট্রেস–সবই ঘুমের মান খারাপ করতে পারে। ড. গুরুভগবতুলা বলেন, অনেকে ভাবেন, অ্যালকোহল ঘুমের জন্য ভালো কিন্তু এটা ভুল ধারণা। এগুলো ঘুমের গভীরতা নষ্ট করে, আর সকালে আরও ক্লান্ত করে তোলে।

ঘুম ভালো রাখার উপায়: বিশেষজ্ঞরা ভালো ঘুমের জোড় দিয়েছেন। আর ভালো ঘুমের জন্য কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করতে বলেছেন। এগুলো হলো:

  • রুটিন মেনে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে ও উঠতে চেষ্টা করুন
  • ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম কমান
  • ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল কমান
  • ঘুমানোর জায়গা হোক অন্ধকার, শান্ত ও আরামদায়ক
  • রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমানোর ঠিক আগে নয়

ঘন ঘন হাই তোলা বা দিনের বেলায় ক্লান্তিতে ঢলে পড়া মোটেই হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। ঘুমের ঘাটতি নিঃশব্দে আপনার শরীরকে ভেতর থেকে ক্ষয় করে ফেলছে, কমিয়ে দিচ্ছে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি। যদি আপনি নিয়মিত এমন সমস্যায় ভোগেন, তাহলে এখনই সময় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার।

সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *