আমাদের রান্নাঘর কিংবা ডাইনিং টেবিলে লবণ যেন এক অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। তবে অতিরিক্ত লবণ স্বাদের চেয়ে শরীরের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে যা ধীরে ধীরে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ জানায়, সাধারণ লবণে রয়েছে ৪০ শতাংশ সোডিয়াম ও ৬০ শতাংশ ক্লোরাইড। এদের মধ্যে সোডিয়ামই মূল অপরাধী, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ এবং কিডনি জটিলতা তৈরি করে। ভারতের রামাইয়া মেমোরিয়াল হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিভাগের প্রধান ডা. শেখ মোহাম্মদ আসলাম জানিয়েছেন, লবণের অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে একাধিক ঝুঁকি তৈরি হয়।
অতিরিক্ত লবণ শরীরকে যেভাবে ক্ষতি করে: ডা. আসলাম ব্যাখ্যা করেন, অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। শরীর তখন অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে, ফলে রক্তপ্রবাহ বাড়ে এবং হৃদ্পিণ্ডকে অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে হয়। এর ফলেই বাড়ে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন, যা হার্ট ও রক্তনালিতে স্থায়ী ক্ষতি করে।এর ফলে রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, তারা শক্ত ও সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে হৃদ্রোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
বিকল্প: চিকিৎসক বাড়তি লবণ খাওয়ার বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন।
- লো-সোডিয়াম লবণ: বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ আস্থুল জৈভারত পরামর্শ দেন, সাধারণ লবণের বদলে কম সোডিয়াম যুক্ত লবণ ব্যবহার করার। এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় স্বাদ বজায় রেখে স্বাস্থ্যরক্ষাও সম্ভব। এর সঙ্গে থাকে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক উপায়ে রান্না: ফ্রেশ ফল, সবজি, মাছ-মাংস এই প্রাকৃতিক খাবারগুলিতে সোডিয়াম কম থাকে। রান্নার সময় লবণের পরিবর্তে মশলা, লেবুর রস বা ভিনেগার ব্যবহার করলে খাবারে স্বাদ যেমন বজায় থাকে, তেমনি শরীরও নিরাপদে থাকে।
- টেবিলে লবণ রাখবেন না: খাবার টেবিলে বাড়তি লবণ রাখলে প্রায়শই না ভেবেই আমরা লবণ ছিটিয়ে নিই। এই অভ্যাস ত্যাগ করাটাই জরুরি।
- ড্যাশ ডায়েট অনুসরণ করুন: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রখ্যাত ড্যাশ ডায়েট অনুসরণ করা যেতে পারে। এতে থাকে ফলমূল, সবজি, হোল গ্রেইন, লিন প্রোটিন ও লো-ফ্যাট ডেইরি যা সোডিয়াম কমিয়ে হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
কতটা লবণ গ্রহণ নিরাপদ: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দিনে ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম প্রায় ১ চা চামচ লবণ গ্রহণ করা উচিত নয়। উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্রোগে আক্রান্তদের জন্য এই সীমা আরও কমিয়ে ১,৫০০ মিলিগ্রাম পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ মানুষ দৈনিক এই সীমার অনেক বেশি লবণ গ্রহণ করেন। আর এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি করে।
লবণ স্বাদ বাড়ায় ঠিকই, কিন্তু মাত্রার বাইরে গিয়ে খেলে তা নীরব ঘাতকে পরিণত হয়। তাই রান্না ও খাওয়ার অভ্যাসে সচেতন পরিবর্তন আনাটাই এখন সময়ের দাবি। কম লবণ খাওয়ার চর্চা একদিকে যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি কমাবে, তেমনি দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা ও জীবনযাপন নিশ্চিত করবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a Reply