বিশ্বজুড়ে কোলন ক্যানসারের (বা বোয়েল ক্যানসার) হার দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো রোগ শনাক্ত না হলে তা শরীরের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। সম্প্রতি গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. জোসেফ সালহাব কোলন ক্যানসারের চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ তুলে ধরেছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক এই উপসর্গগুলো কী কী এবং কেন এগুলোকে গুরুত্ব দেয়া উচিত:
১. পেট ফাঁপা
লক্ষণীয় রকমের পেট ফাঁপা কোলন ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে। টিউমার যদি অন্ত্রে আংশিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাহলে গ্যাস ও বর্জ্য জমে গিয়ে পেট ফুলে যেতে পারে। এই ফাঁপাভাব সহজ খাদ্য পরিবর্তন বা ওষুধে কমে না এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২. রাতে অতিরিক্ত ঘাম
রাতে ঘাম হওয়া অনেক সময় সাধারণ সমস্যা মনে হলেও, এটি কোলন ক্যানসারের ইঙ্গিত দিতে পারে। শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন টিউমারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তখন জ্বর ও ঘামের প্রবণতা বাড়ে। টিউমার থেকে নিঃসৃত কিছু উপাদান শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটায়।
৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দিনের মধ্যে অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়া
যদি আপনি নিয়মিত বিশ্রাম নিয়েও সবসময় ক্লান্ত বোধ করেন বা দিনের মধ্যে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েন, তা কোলন ক্যানসারের কারণ হতে পারে। কারণ ক্যানসারের কারণে শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়, ফলে শরীরের টিস্যুগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। এর ফলে গভীর ও অপ্রতিরোধ্য ক্লান্তি দেখা দেয়।
৪. মলে রক্ত
মলের সঙ্গে রক্ত দেখা গেলে তা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। কোলন বা রেকটামের টিউমারগুলো নড়াচড়ার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত ঘটায়। এই রক্ত কখনো উজ্জ্বল লাল আবার কখনো গাঢ় রঙের বা তারের মতো হয়ে দেখা যায়। এটি হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
কারা বেশি ঝুঁকিতে: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে কোলন ক্যানসার তৃতীয় সর্বাধিক ধরা পড়া ক্যানসার। সাধারণত ৫০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে গত ১৫ বছরে ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই ক্যানসারের হার প্রতি বছর ১.৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।
বাওয়েল ক্যানসার বা কোলন ক্যানসার অনেক সময় নীরবে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, যখন তা ধরা পড়ে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই শরীরের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিবর্তনগুলো উপেক্ষা না করে গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। যদি দীর্ঘস্থায়ী ফোলা ভাব, অস্বাভাবিক ঘাম, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা মলের রঙে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে এই রোগ নিরাময় করা যায়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Leave a Reply