free tracking

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব এড়াতে যে চিকিৎসা করণীয়!

সন্তান জন্ম না নেওয়ার কারণে অনেক দম্পতি উদ্বেগে থাকেন। সমাজে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে—বন্ধ্যাত্ব শুধু নারীদের হয়। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, বন্ধ্যাত্বের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ই দায়ী হতে পারেন। পুরুষের বন্ধ্যাত্বও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ, চিকিৎসা ও করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মোসাম্মাত রাশিদা বেগম।

বন্ধ্যাত্ব কী?

ডা. রাশিদা বেগম বলেন, “কোনো দম্পতি যদি এক বছর ধরে কোনো ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া সহবাস করেও সন্তান গ্রহণে ব্যর্থ হন, তবে তাকে বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। এটি নারী কিংবা পুরুষ—উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে।”

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব মূলত শুক্রাণুর গুণমান ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। শুক্রাণু যদি নারীর শরীরে পৌঁছাতে না পারে বা তার গুণগত মান খারাপ হয়, তাহলে সন্তান ধারণে বাধা সৃষ্টি হয়। এই সমস্যার কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো:

১. শুক্রাণু তৈরি না হওয়া।

২. পরিমাণে খুব কম শুক্রাণু তৈরি হওয়া।

৩. শুক্রাণুর গতিশীলতা ও আকৃতিতে সমস্যা।

৪. সহবাসে অক্ষমতা বা শুক্রাণু নির্গমনে বাধা।

৫. পরিবেশগত দূষণ, আধুনিক প্রযুক্তির রশ্মি, দূষিত খাবার, ধূমপান ও অ্যালকোহল।

৬. হরমোনের ঘাটতি ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।

৭. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন ক্যানসারের ওষুধ ও রেডিওথেরাপি।

৮. এজোস্পার্মিয়া (বীর্যে শুক্রাণু না থাকা)।

৯. জন্মগত সমস্যায় শুক্রাণু নির্গমনের পথ না থাকা বা নালী বন্ধ থাকা।

১০. অণ্ডকোষে সংক্রমণ, আঘাত বা মাম্পসের মতো রোগের পরিণতিতে প্রজনন অক্ষমতা।

চিকিৎসা ও করণীয়

ডা. রাশিদা বেগম বলেন, “পুরুষের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা সম্ভব। তবে নির্দিষ্ট কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে, যেমন পুরোপুরি শুক্রাণুহীন অবস্থায়, চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়।”

নিম্নোক্ত কিছু করণীয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য:

১. হরমোনের ঘাটতি থাকলে হরমোন থেরাপি।

২. গরম পরিবেশে কাজ করলে ঠান্ডা পরিবেশে যাওয়া বা পেশা পরিবর্তন।

৩. রাসায়নিক ও কীটনাশক এড়িয়ে চলা এবং অর্গানিক খাবার গ্রহণ।

৪. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার।

৫. প্রয়োজনীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে তা চিকিৎসকের পরামর্শে বন্ধ করা।

৬. ক্যানসার চিকিৎসার আগে শুক্রাণু সংরক্ষণ।

৭. শুক্রাণুর পরিমাণ অনুযায়ী আইইউআই, আইভিএফ বা ইকসি পদ্ধতির চিকিৎসা।

৮. শুক্রাণু নির্গমনের পথে বাধা থাকলে সার্জারি।

যদিও সম্পূর্ণ শুক্রাণুহীন অবস্থা হলে, চিকিৎসার সুযোগ সীমিত বলেও জানান ডা. রাশিদা বেগম।

সচেতনতা জরুরি

তিনি আরও বলেন, “পুরুষের বন্ধ্যাত্বের বিষয়টি লুকানো বা অবহেলার কিছু নয়। এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা। নারীর পাশাপাশি পুরুষের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কেও সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *