বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ন্যাশনাল কনশাসনেস পার্টি (এনসিপি) নেতা নাহিদ ইসলামের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এই বিতর্কের সূত্রপাত। পোস্টে তিনি দাবি করেন, গত বছরের আগস্টে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তার দলের একটি বৈঠক হয়েছিল, যেখানে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে।
নাহিদ ইসলামের অভিযোগ
নাহিদ ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন যে, গত বছর আগস্ট মাসে তার দল এনসিপি এবং সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে একটি বৈঠকে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
বিএনপির আইটি সেলের পাল্টা ব্যাখ্যা
নাহিদ ইসলামের এই দাবিকে ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির আইটি সেলের টিম লিডার নাজমুল হক। তিনি ঐ বৈঠকের আয়োজক এবং উপস্থিত ছিলেন বলে জানান। নাজমুল হক তার ব্যাখ্যায় বলেন, ৭ আগস্ট, ২০২৪-এর ভোরে নাহিদ ইসলাম তাকে ফোন করে জানান যে তারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে দেখা করতে চান। তখন দেশের পরিস্থিতি ছিল অস্থিতিশীল এবং ছাত্রনেতারা দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিলেন না।
নাজমুল হক জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তিনি তার বিশেষ সহকারী ইউনুস ভাইকে ফোন করেন। পরে মির্জা ফখরুলের বড় মেয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি সবাইকে বাসায় যেতে বলেন কারণ তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন।
বৈঠকের আলোচনায় সরকার গঠন নিয়ে কথা উঠলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিএনপি যদি অফিসিয়াল প্রস্তাব চায় তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে প্রস্তাব দেওয়া হবে। তখন ছাত্রনেতা মাহফুজ আলম বলেন, তারা সবার কাছ থেকে নামের সাজেশন চাচ্ছেন, নাম দিলেই উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হবে এমন নয়।
বিএনপির অবস্থান ও যুক্তি
নাজমুল হক বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন লড়াই করেছে এবং জনগণের ভোট ছাড়া কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের অংশ হতে চায় না। তিনি আরও বলেন, বিএনপি যদি সে সময় জাতীয় সরকারে যেত, তাহলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ বড় একটি অংশ বিএনপিকে দেওয়া হতো। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রহীন পথ বেছে নেয়নি কারণ তারা জনগণের ভোটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
ছাত্র সমন্বয়কদের ক্ষোভ ও মিডিয়া ট্রায়াল
নাজমুল হকের মতে, বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনে অস্বীকৃতি জানানোয় ছাত্র সমন্বয়করা কিছুটা ক্ষিপ্ত ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, বিএনপি জাতীয় সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ট্রায়াল করা হচ্ছে, যা একটি অসম্পূর্ণ আলোচনা। তিনি মনে করেন, জনগণের ভোট ছাড়া একটি জাতীয় সরকারের অংশ হওয়া মানে জনগণের সাথে বেঈমানি করা এবং অগণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া।
এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।
Leave a Reply