ফেরদৌস বলেন, প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে একসময় আমাদের বেতন ব্যবধান ছিল ১০ টাকা। আর এখন হবে তিন ধাপে কয়েক হাজর টাকা। এই বৈষম্যের অবসান চাই।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মকরধ্বজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, বিগত সরকার আমাদের মূল্যায়ন করেনি। বর্তমান সরকারপ্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিয়েছে। এই সরকারের আমলেই সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের বাস্তবায়ন চাই।
কর্মকর্তারা হতাশ
এদিকে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড কার্যকর হওয়ার পর একই গ্রেডে থাকা এইউইওরা ৯ম গ্রেড চাইছেন। তাদের মতে, প্রশাসনিক কাঠামোর ভারসাম্য বজায় রাখতে এইউইওদের ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা জরুরি। তা না হলে প্রাথমিক শিক্ষার তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, ইউএপিইও পদটি ১৯৭৮ সালে সৃষ্টি হয়। ১৯৯৪ সালে সংশোধিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী পদটি ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। সে সময়ের অধস্তন প্রধান শিক্ষক পদটি ১৭তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ১৮তম গ্রেডে ছিল। পরে প্রধান শিক্ষক পদটি কয়েক দফায় উন্নীত করায় ১০ম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষক পদটি ১৩তম গ্রেডভুক্ত হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট পদটি ৯ম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি ৩য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণি (৯ম গ্রেড) উন্নীতকরণ করা হয়েছে। অথচ ৩০ বছর ধরে ইউএপিইও পদটি ১০ম গ্রেডে রয়ে গেছে।
রাজধানীর ডেমরার সহকারী থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ মিলন মিয়া সমকালকে বলেন, ইউএপিইওরা প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের প্রশাসনিক ও একাডেমিক তত্ত্বাবধায়ক, মেন্টর, মনিটর, এসিআর ও ছুটি প্রদানকারী কর্মকর্তা। এ ক্ষেত্রে ইউএপিইও, প্রধান শিক্ষক একই গ্রেড হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা হিসেবে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মূল কাজের পাশাপাশি সরকারের অর্পিত বিভিন্ন দায়িত্ব যেমন ভোটার রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত কাজে সহকারী রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা, নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ভিজিএফ ও ভিজিডি-সংক্রান্ত কাজে তদারককারী কর্মকর্তা, সমাজসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, স্থাস্থ্যসেবা ও নকলমুক্ত পরিবেশে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সহায়তাসহ নানা কাজ করে থাকি।
গুলশানের সহকারী থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব আল আমিন হাওলাদার বলেন, সরকারের নন-ক্যাডার ১ম শ্রেণির (৯ম গ্রেড) কর্মকর্তার জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ইউএপিইওদের নিয়োগবিধিতে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা, নিয়োগ প্রক্রিয়া ও অন্যান্য শর্তাবলি একই। অথচ বেতন কেন দুই রকম হবে?
নতুন প্রস্তাবে কার বেতন কত হবে
সরকারের কাছে দেওয়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাবে শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডের (১১ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে ১১তম গ্রেড (১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল) করার কথা বলা হয়েছে। সারাদেশে ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন সাড়ে তিন লাখের বেশি। ইউএপিইওদের ১০ম গ্রেডের (১৬ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে ৯ম গ্রেড (২২ হাজার টাকা স্কেল) দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সারাদেশে এই পদের সংখ্যা দুই হাজার ৬০৭টি। ইউপিইওদের দেওয়া হবে ৯ম গ্রেডের (২২ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে ৮ম গ্রেড (২৩ হাজার টাকা স্কেল)। এ পদে কর্মরত ৫১৬ জন কর্মকর্তা। ডিপিইও আছেন ৬৮ জন, তাদের বেতন সপ্তম গ্রেডের (২৯ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে ষষ্ঠ গ্রেড (৩৫ হাজার ৫০০ টাকা স্কেল) দিতে সুপারিশ করা হচ্ছে। এর বাইরে বিভাগীয় উপপরিচালকদের পঞ্চম গ্রেডের (৪৩ হাজার টাকা স্কেল) পরিবর্তে চতুর্থ গ্রেডে (৫০ হাজার টাকার স্কেল) বেতন দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।
Leave a Reply